বৈশাখী মেলা দেখার দিনলিপি লেখ

বৈশাখী মেলা দেখার দিনলিপি লেখ

বৈশাখী মেলা দেখার দিনলিপি লেখ।

বৈশাখী মেলা দেখার দিনলিপি
৮ কার্ত্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার
রাত ১০টা

প্রতিটি দিনই আমার কাছে নতুন, সম্ভাবনাময় এবং জীবন গঠনের নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠার আহ্বান। তবে আজকের দিনটি ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিন্ন। স্বাগত জানিয়েছি ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে, নতুন বছরের প্রথম দিনের প্রথম প্রভাতে:

‘বছর মিলেছে নতুন বছরে, ঘণ্টা বেজেছে মনের দুয়ারে 
নব-জীবনের বারতা হাতে নববর্ষ এসেছে আমাদের দ্বারে 
চলো, বরণ করি তারে –নবপ্রভাতের বন্দনা-গীতে;
অমলিন প্রেম শাশ্বত ভালোবাসা – যতটুকু হৃদয়ে আছে
বিলিয়ে দিই উদারপ্রাণে, সকলের তরে—বাংলাদেশে—বিশ্বপ্রাণে। ’

দিনের পরিকল্পনা করতে গিয়ে গত রাতে ভালো ঘুম হয়নি। তবু খুব ভোরে উঠেছিলাম পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী। বাসার পরিকল্পনার সঙ্গে আমার পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তদুপরি বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার খাব এই ছিল পরিকল্পনা। আমি আমার দিনলিপিতে সেটি যোগ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু বাবাকে জানিয়েছিলাম কলেজের অনুষ্ঠানের কথা। বাবা বললেন অবশ্যই যাবে, তবে দুপুরের মধ্যে বাসায় ফিরে আসতে হবে।

মজার ঘটনাটি ঘটল সকালে। বাবা সবাইকে ডেকে ঘুম থেকে জাগালেন এবং হাতমুখ ধুয়ে প্রার্থনা শেষে ড্রইং রুমে আসতে বললেন। আমরা সবাই একসঙ্গে এসে বসার আর সুযোগ পেলাম না, বাবা আমাদের নতুন জামা-কাপড় উপহার দিলেন। আমি বাবা ও মাকে সালাম জানিয়ে আশীর্বাদ নিলাম। মনটা খুশিতে ভরে গেল। ভাবলাম বিধাতা যেন বছরের প্রতিটা দিন এরকম বাবা-মায়ের আশীর্বাদ অর্জন করার সুযোগ দেয়। সবাই যেন এরকম হাসিখুশিতে দিন। কাটাতে পারি। মুহূর্তেই আরো অনেক কিছু ভেবে ফেললাম। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই দেখেছি বাবা একজন আদর্শ মানুষ, দেশপ্রেমিক এবং মনেপ্রাণে বাঙালি।

পরিবারের সবাই নাস্তার টেবিলে বসে মিষ্টিমুখ করে নাস্তা সেরে নিয়েছিলাম। তারপরেই কলেজের উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। আমাদের কলেজ মাঠে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে সকাল সকাল পৌঁছে গেলাম। নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করে আমরা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা'য় যোগদান করলাম। তারপরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা শুরু হলো। আমি বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম।

বাসায় ফিরে দেখি আমার জন্যে সবাই অপেক্ষা করছে। পরিবারের সবাই মিলে বের হলাম বৈশাখী মেলার উদ্দেশে মেলায় এত ভিড় যে পা ফেলার জায়গাটুকু নেই। সারি সারি দোকান-পাটে হরেক রকমের জিনিসের পসরা। এসব চিড়া, মুড়ি, খই, দোকানে মাটির তৈজসপত্র, খেলনা গাড়ি, পুতুল, চুড়ির দোকান; বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন : বাতাসা ইত্যাদি; বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারোহ ছিল। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় বিনোদনের ব্যবস্থাও ছিল। লোকগায়ক ও লোকনর্তকদের উপস্থিতি ও তাদের নাচ-গানে মেলা ছিল আনন্দমুখর। এছাড়া শিশু-কিশোরদের আকর্ষণের জন্যে ছিল বায়োস্কোপ। শিশু-কিশোররা বায়োস্কোপ ও নাগরদোলার আশপাশে ভিড় জমিয়েছিল। অনেকে নাগরদোলায় চড়ে মজা করছিল। বাবা-মা আমাদের হাত ধরে ধরে একটু কম ভিড়ের দোকানগুলো থেকে নানা প্রকার জিনিসপত্র কেনাকাটা করলেন। মেলা শেষে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত দশটা বেজে গিয়েছিল। অবসন্ন ক্লান্তদেহ নিয়ে আমি লিখে নিলাম আমার জীবনের স্মরণীয় একটি দিনলিপি। মনের মধ্যে গুণগুণ করে গাইছিলাম নববর্ষের গান। কবিতাটি আজকে কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। এ নিয়ে আমার কোনো আক্ষেপ নেই বরং আনন্দ পাচ্ছি যে দিনলিপিতে কবিতাটি লিখতে পেরেছি :

আজিকে সবাই দীন-হীন ভুলে/মুক্ত-প্রাণে মিলাবে, মিলিবে সবে 
অকৃপণ মনে বিলাবে কেবল/ ভুবনের প্রেম আনন্দ উচ্ছ্বাসে। 
হে বৈশাখ তুমি প্রতিদিন এসো/ মনের দুয়ারে কড়া নেড়ে বলো- 
‘শাশ্বত প্রেমে আমি, তুমি সে/ নিত্যজীবন আনন্দে ভরে উঠুক।' 
হে বৈশাখ তুমি প্রতিক্ষণে এসো/ রুদ্র-খর-তাপে জরাজীর্ণকে বল— 
জেগেছ কি? জেগে ওঠো বাঙালি/ বাংলা আমার, বাংলাদেশের প্রাণ ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url