সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা কর
নিরাপদ সড়ক চাই বিষয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা কর।
অথবা, সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে সচেতনতা এই শিরোনামে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা কর।
অথবা, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা কর।
সাকিব: গতদিন কলেজে আসনি কেনো লিমন ?
লিমন: সড়কে মৃত্যুর মিছিল!
সাকিব: তার মানে!
লিমন: বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে- বাসে ওঠতে যাব এমন সময় পেছন থেকে একটা বাস এসে ধাক্কা দিল আমাদের বাসটাকে; যেন ব্রেক ফেল করেছে— নিয়ন্ত্রণহীন গতি। তক্ষুনি আমরা চার-পাঁচ বন্ধু ছিটকে পড়ে কমবেশি আহত হয়েছি—মৃত্যু যেন আমাদের বাঁচিয়ে দিল।
সাকিব: বলিস কী! আমাকে জানালেনা কেনো ?
লিমন: সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কী আর বলব! সড়কে মৃত্যুর মিছিলে নিহতদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে সমগ্র দেশ যখন প্রতিবাদ মুখর, তখনও গাড়ি চালকদের অসচেতন অবৈধ আচরণ; এ নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা নেই, সচেতনতা নেই।
সাকিব: হ্যাঁ, তাইতো মনে হচ্ছে। মাত্র কদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে ‘নিরাপদ সড়ক চাই' সংগঠন তার প্রতিবেদনে জানাল—সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা ২৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৬ সালে সারা দেশে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৪ জন। ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৪৫ জন।
লিমন: সাকিব, প্রকৃত পরিসংখ্যান কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি বলে আমি মনে করি। দৈনিক প্রথম আলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য হলো— ২০১৮ সালে ৫৫১৪ সড়ক দুর্ঘটনায় ৭২২১ জন নিহত। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয় পরিবহন খাতে জবাবদিহি নিশ্চিত না করতে পারায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাচ্ছেনা।
সাকিব: লিমন, তুমি কি 'বাংলাদেশ হেলথ ইনজুরি সার্ভে-২০১৬' প্রতিবেদন পড়েছ। প্রকল্পের পরিচালক বলেন 'প্রতি বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ১৬৬ জন নিহত হন। তাতে প্রতিদিন নিহতের সংখ্যা ৬৪ জন।'
লিমন: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর বাংলাদেশের জিডিপির ২ শতাংশ ক্ষতি হয়। বাংলাদেশের জিডিপি ১৭ লাখ কোটি টাকা। তার ২ শতাংশের পরিমাণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। তবে এই ক্ষতি বাস্তবে আরো বেশি।
সাকিব: একথা সত্য লিমন—সড়কের সব ব্যাধি একদিনে তৈরি হয়নি, রাতারাতি তা নিরাময়ও হবেনা। কিন্তু গণপরিবহনখাতে যে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা চলে আসছে, সেটি দূর করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ন্যূনতম উদ্যোগ না থাকা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
লিমন: তুই ঠিক বলেছিস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কোম্পানিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু এবং চালকদের লাইসেন্স দিতে নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই।
সাকিব: এ-কথা ঠিক যে চালকরাই পরিবহন সেক্টরে চালিকাশক্তি। শতকরা ৮০ ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে চালকের কারণে। বেপরোয়া ও গতিসীমার অধিক ধ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেক, অবৈধ যানবাহন দায়িত্বজ্ঞান ও পেশাগত জ্ঞানের অভাব, ট্রাফিক নিয়মকানুন মেনে না চলা, যাত্রী ও নিজের নিরাপত্তার প্রতি উদাসীন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া, সচেতনতা ও নিরাপত্তা বোধের অভাব, শিক্ষার অভাব, ভুয়া লাইসেন্সের কারণে চালকদের মধ্যে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি হচ্ছেনা।
লিমন: আমিও তোর সঙ্গে একমত – যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস ও পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রথমেই নজর দেওয়া প্রয়োজন গাড়ি চালকদের প্রতি। দক্ষ, সচেতন, দায়িত্ববান ও পেশাদার চালক তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার।
সাকিব: সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার ব্যাপারে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এছাড়া সড়ক ও মহাসড়কের নির্মাণে ত্রুটি ও দুর্বল সড়ক ব্যবস্থাপনাও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
লিমন: সাকিব, যাত্রী ও পথচারীদের ব্যক্তি নিরাপত্তা ও বিধি-বিধান প্রতিপালনে সচেতন হতে হবে। নাগরিকদের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা মানার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে হবে। সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, সুধীসমাজের মনতা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের যথাযথ আইন প্রয়োগে সহায়তা প্রদান করলে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করা সম্ভব।
সাকিব: প্রশাসন, পুলিশ, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপথ, মালিক, চালক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
লিমন: সড়ক দুর্ঘটনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। সাকিব, আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক, আর যেন কেউ স্বামীহারা বিধবা বা পত্নীহারা, সন্তানহারা, পিতাহারা বা মাতাহারা এতিম কিংবা স্বজনহারা নাহয় এ আমার প্রত্যাশা।
সাকিব: নিশ্চয়ই, সড়ক হবে নিরাপদ, শান্তির। জীবনের নিরাপত্তা দান করা বা বিধান করা বা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। নিরাপদ সড়কের জন্য পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সচেতন হওয়া অপরিহার্য। সড়ক পথ কখনো মৃত্যুর পথ হতে পারেনা, আমরা নিরাপদ নির্বিঘ্নে পথ চলতে চাই, নিরাপদ সড়ক চাই।
লিমন: ধন্যবাদ সাকিব ।
সাকিব: তোমাকেও ধন্যবাদ।