ভাব-সম্প্রসারণ : প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত, বাঁচিবার অধিকার তাহারই

প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত, বাঁচিবার অধিকার তাহারই

প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত, বাঁচিবার অধিকার তাহারই।

ভাব-সম্প্রসারণ : মরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যে মানুষ ভীত হয় না, তার জীবনই যথার্থ সার্থকতার দাবিদার। বেঁচে থাকার অধিকারী হতে হলে মরণকে তুচ্ছ বলে বিবেচনা করতে হবে। মানুষ আর মৃত্তিকার প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা প্রয়োজনে হাসিমুখে প্রাণ উৎসর্গ করে, অমরত্ব একমাত্র তাদেরই প্রাপ্য। ভীরুতা নয়, আত্মপ্রত্যয়ই জীবনের যথার্থ ধর্ম। প্রবাদ আছে- ‘মৃত্যুর শীতল হস্ত রাজার ওপরও পতিত।' অর্থাৎ মৃত্যু অনিবার্য, এর ভয়াল হাত থেকে কারো লীলাখেলা প্রতিনিয়ত দেখেও মানুষ জীবনের মায়া ত্যাগ করে না। জীবনের প্রয়োজনেই সে নিষ্কৃতি নেই। মৃত্যুর বেঁচে থাকে। আবার জীবনের প্রয়োজনেই মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়। মরণজয়ী দুঃসাহসী মানুষেরাই মৃত্যুকে বুক পেতে নিয়ে গড়ে তুলেছে মানবসভ্যতার মহিমান্বিত ঐশ্বর্য। মৃত্যুকে বরণ করে মৃত্যুকে জয় করেছেন তাঁরা। মৃত্যুভয়ে শঙ্কিত হয়ে জীবনযাপনের মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই। ভয়ের মধ্যে থাকলে জীবনের সুখ ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সেজন্যে ভয়ার্ত জীবন সফল জীবন বলে বিবেচিত হতে পারে না। জীবনকে সত্যিকারভাবে সফল ও উপভোগ্য করতে হলে মৃত্যুভয় পরিহার করতে হবে। কর্মময় মানবজীবনের প্রতিটি কাজেই কম-বেশি ঝুঁকি আছে। যে কাজ যত দুরূহ, যত বিপজ্জনক সে কাজে মৃত্যুর ঝুঁকি তত বেশি। এমনক্ষেত্রে দৃঢ়চিত্ত সাহসীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্ম সম্পাদন করতে পিছ-পা হয় না। এ কারণেই পৌরুষদীপ্ত লোকেরাই ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে সফলতা বয়ে আনে। জীবন বাজি রেখে এরাই খনি থেকে আকরিক সংগ্রহ করে'। স্বাধীনতা সংগ্রামে ও মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়ে চির অমরত্ব লাভ করে। বস্তুত মৃত্যু জীবনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। একদিন মৃত্যুর হাতে নিজেকে সমর্পণ করতেই হবে। তবে মৃত্যুর শ্রেণিভেদ আছে। মৃত্যু কখনো কাপুরুষোচিত, কখনো স্বাভাবিক, কখনো বীরের। বীরোচিত মৃত্যুই মানুষকে অমরত্ব দান করে। মানুষমাত্রেরই অমরত্ব লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা থাকে। একমাত্র বীরোচিত মৃত্যুই মানুষের এ আকাঙ্ক্ষাকে পরিপূর্ণ করতে পারে। যেমনিভাবে পৃথিবীর বুকে আজও বেঁচে আছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বিজ্ঞানী নিউটন প্রমুখ। এই বেঁচে থাকা আর স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এর জন্যে প্রয়োজন সাহসী সৈনিকের প্রত্যয়দীপ্ত মৃত্যু।

জীবনের প্রতি মায়া দেখালে মৃত্যুভয় এসে জীবনকে মর্যাদাহীন করে তোলে। জীবনের প্রয়োজনে মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়ার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত ৷

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url