তোমার কলেজ জীবনের শেষ দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর

তোমার কলেজ জীবনের শেষ দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর

তোমার কলেজ জীবনের শেষ দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।

কলেজ জীবনের শেষ দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণন :

দিন আসে দিন যায়, মাস পেরিয়ে একসময় বছরও কেটে যায়— স্মৃতি-বিস্মৃতির দোলায় জীবনও থেমে থাকে না। সুখ-দুঃখকে বয়ে নিয়ে সেও ধেয়ে চলে। তার গন্তব্য কোথায় আমরা কেউ জানি না বলেই জীবনের আগামী দিনগুলোর অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু ফেলে আসা দিনগুলো কি ভোলা যায়? স্মৃতির পাতায় দাগ কেটে দেয় কিছু কথা, কিছু ব্যথা, সুখ, দুঃখ, আনন্দ অথবা কিছু মুহূর্ত অথবা পুরো-একটি দিন। এরকম একটা দিন আমার স্মৃতির পাতায় আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। সেটি হলো আমার কলেজ জীবনের শেষ দিনের অভিজ্ঞতা।

দিনটি ছিল মঙ্গলবার। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই আমি আমার জীবনের একটি নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হব। চঞ্চল মন আজ অনেকটাই বিষাদ-বেদনায় ভারাক্রান্ত। তবু একটা আনন্দ-উত্তেজনা আমাকে বারে বারে তাড়া করে ফিরছে। এর সঙ্গে ফাইনাল পরীক্ষার ভয়ও আছে। কিছুটা অস্থির চিত্তেই সেদিন হাজির হয়েছিলাম কলেজের শেষ দিনটিতে— বিদায় অনুষ্ঠানে। গতদিন আমাদের ফরম পূরণের শেষদিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ আমাদের বিদায়ের দিন। কলেজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা দেয়া হবে। আমরা যারা পরীক্ষার্থী ছিলাম সবাই অন্যদিনের চেয়ে দু-ঘণ্টা আগেই কলেজে এসে হাজির হয়েছি। কিন্তু এ কী কাণ্ড! আজ আর কারো মনে কোনো আনন্দ নেই, নেই কোনো চঞ্চলতা, সবার চোখেমুখে একটা বিষণ্নতার ছাপ। চারদিকে যেন বিদায়ের সকরুণ ঘন্টা ধ্বনি বেজে চলেছে, গির্জার ঘণ্টাধ্বনির মতো সে-ধ্বনি আকাশে-বাতাসে প্রতিফলিত হয়ে আমার হৃদয়কে ক্ষত- বিক্ষত করতে লাগল। মনে হলো সবচেয়ে বেশি কষ্ট বোধহয় আমিই পাচ্ছি। আসলে এ-কষ্ট এবং দুঃখ কাউকে বোঝানো কিংবা বলা যায় না বলেই এর তীব্রতা ও দহন এত বেশি।

বিদায় বাণীর করুণ রাগিণী মর্মস্পর্শী সংগীতের আবহ তৈরি করে। যার বিদায় আসন্ন, সে এই রাগিণীর স্পর্শে আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। আমরা যারা কলেজে শেষ দিনটি কাটিয়েছিলাম তারাই সেদিন বুঝেছিলাম সেই সকরুণ অথচ আনন্দঘন অনুভূতিটুকু। সবার মাঝেই একটা নতুন শুরুর সম্ভাবনার উদয় হলেও বিদায়ের ব্যথাও অনুভূত হচ্ছিল। তখন জানতাম না, এমনকি এখনো জানি না সেই শুরুর শেষ কোথায়, কিন্তু সেই বিদায়ের শুরুটা অন্তরকে ছেয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চোখকে প্লাবিত করে গিয়েছিল। সে যাক, যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কলেজের প্রথম বর্ষের কৃতী ছাত্রী বৃষ্টি আমাদের সবাইকে ফুলেরমালা পরিয়ে দিল। সূচনা হলো বিদায়পর্ব। ছাত্রসংসদের সম্পাদক আজিজুর রহমান লিয়ন সূচনা-ভাষণ দিল। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেকে বক্তব্য রেখে আমাদের প্রতি তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করল। 

কলেজের শ্রেষ্ঠছাত্র হিসেবে আমাকে যখন বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যে বলা হলো, তখন আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না কীভাবে কথা বলব। স্বভাবতই আমি একটু বেশি আবেগপ্রবণ, তার ওপর বিদায়ের এই দিনে কিছু বলা আমার জন্যে যে একেবারেই অসম্ভব ছিল। কিন্তু অধ্যক্ষের আদেশ বলে তা প্রত্যাখ্যান করা আদৌ সম্ভব নয়, শেষ পর্যন্ত বক্তব্যের জন্যে দাঁড়ালাম- 'এত আশা ভালোবাসা, এতই নিরাশা, এত দুঃখ কেন?' – যেতে নাহি মন চায় ... এতটুকু বলার পর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমি জানি আমার মুখ দিয়ে আর একটি অক্ষর বের হলে তা গগনবিদারী চিৎকার হয়ে বের হতো। দু-চোখের জল স্বামী মানল না। দীর্ঘ পনেরো সেকেন্ড পর অতি কষ্টে উচ্চারণ করলাম আমাদের জন্যে দোয়া করবেন। এই বলে আমার বক্তব্য শেষ করতে হলো। উপস্থিত সবাই আমার সঙ্গে আবেগপ্রবণ হলো। কিছুটা সময় নিশ্চুপ কাটল, কোনো পিনপতনের শব্দ হলো না। সভাপতির ভাষণে বক্তব্য রাখলেন আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক মাননীয় অধ্যক্ষ। তিনি আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে চলার পথের পাথেয় সম্পর্কে নানা উপদেশ দিলেন। সবশেষে আমাদের সবাইকে উপহার হিসেবে একটি করে বই ও কলম দিলেন। এরপর সংগীতানুষ্ঠান। বিদায়ের গানে বেদনার সুর বেজে উঠতেই আমাদের কলেজজীবনের শেষ দিনের মুহূর্তগুলো হৃদয়পটে ছবির মতো আটকে গেল। এ-স্মৃতিময় অভিজ্ঞতার কথা কখনোই ভুলবার নয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url