তোমার কলেজ জীবনের কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর
তোমার কলেজ জীবনের কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
রক্ত দেখে ভয়ের অভিজ্ঞতা
গ্রীষ্মের ছুটির পর কলেজ খুলেছে। আমরা সবাই নতুন উদ্যমে কলেজে এসেছি। ক্লাসে ঢুকে পরস্পর কুশল বিনিময় করছি, কোলাকুলি করছি। ক্লাস শুরু হতে তখনো ২০ মিনিট বাকি। হঠাৎই অমিত চিৎকার করে উঠল, অর্ণব পড়ে গেছে। হতভম্ব হয়ে রইলাম এক মুহূর্ত। তারপর অমিতের পেছনে দে ছুট। কিছুটা হইচইয়ের মতো হয়ে গেল। মুখের উপর জানতে চাইল অনেকে —কী হয়েছে কীভাবে পড়েছে, কোথায় পড়েছে? কিন্তু কেউ কারো প্রশ্নের উত্তর করছে না। এক এক করে ক্লাসের সবাই অমিতের পেছন পেছন দ্রুত, কিছুটা দৌড়িয়ে ছুটল। কলেজ গেটের কাছে ছোট্ট একটা ভিড়। ভিড় ঠেলে অমিতের সাথে আমিও ঢুকলাম। দেখলাম, সত্যি সত্যিই অর্ণব পড়ে আছে। সবাই বলাবলি করছে কীভাবে কী হলো। কিন্তু অমিত ওসব কথায় কান না দিয়ে বলল, অর্ণবকে তুলে নিয়ে চল, ওর মাথায় পানি দিতে হবে। দু-তিনজন মিলে ছুটে গেল ডাক্তারের খোঁজে। পানি দেয়ার পর ওর জ্ঞান ফিরল। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলল, তোরা আমাকে ঘিরে আছিস কেন? আমার মাথা ভেজা কেন? সবাই অর্ণবের দিকে তাকিয়ে আছে, মনোযোগী শ্রোতার মতো ওর কথা শুনছে। কেউ উত্তর করছে না। এ-অবস্থায় কী উত্তর করতে হয় তা হয়তো কারো জানা নেই। ভিড় ঠেলে শুধু দু-একজন তাকে ডাকল— এই অর্ণব, এই অর্ণব। হয়তো জানার চেষ্টা করছে, অর্ণবের জ্ঞান ফিরেছে তো, সে ঠিকঠাক আছে তো, ইত্যাদির কোনো একটি।
এমন সময় শ্রেণিশিক্ষক এসে হাজির হলেন। ততক্ষণে অর্ণব উঠে দাঁড়িয়েছে। শার্টও ঠিক করছে, পায়ের জুতা ভিজে গেছে, সেদিকে মনোযোগ তার। কিন্তু তার পিঠে বেশ কিছুটা জায়গা কাটা, সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। অর্ণবের পিঠ থেকে রক্ত ঝরতে দেখে স্যার কেমন যেন হয়ে গেলেন, পড়ে গেলেন ঘাসের ওপর। অজ্ঞান হয়ে গেলেন। আমি আমার শার্টটা খুলে ওর পিঠের ক্ষতটা বেঁধে দিলাম। প্রিন্সিপাল স্যার অন্যান্য স্যারকে নিয়ে এলেন। দেখলেন দুজনকেই। তারপর ফোন করলেন ডাক্তার সাহেবকে দ্রুত আসার জন্য। এরই মধ্যে মামুন, সোহেল, ইফতেখার ডাক্তার সাহেবকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে। আমরা ধরাধরি করে স্যারকে আর অর্ণবকে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে নিয়ে গেলাম। ডাক্তার সাহেব আসতে আসতেই স্যারের জ্ঞান ফিরে এলো। ডাক্তার সাহেব স্যারের পাস দেখে বললেন, আপনি রক্ত দেখে ভয় পেয়েছিলেন, কোনো ভয় নেই। কিছু হয়নি আপনার। আর ছেলেটিরও তেমন কিছু হয়নি। একটু ওয়াশ করেই সেলাই করে দেব, একদম ঠিক হয়ে যাবে। কোনো ভয় নেই। আমরা শ্রেণিশিক্ষকের সাথে ক্লাসে ঢুকলাম। কিন্তু অপেক্ষায় রইলাম অর্ণবের জন্য। একটু পরেই অর্ণব এলো। স্যার হাসতে হাসতে বললেন, এই রক্ত নেই তো কোথাও ! অর্ণব না সূচক মাথা নাড়ল। ঠিক আছে, এসো। আমরা সবাই হেসে উঠলাম। অর্ণবও মৃদু হাসল। তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা দেখে সে কিছুটা বিস্মিতও হলো, আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে সে ভুল করল না। আমরা আরো জোরে হেসে উঠলাম। এই ঘটনার অভিজ্ঞতা আমি কখনো ভুলবনা। এটাই আমার কলেজজীবনের তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা।