বাংলা ব্যাকরণের পরিধি বা আলোচ্য বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা কর

বাংলা ব্যাকরণের পরিধি বা আলোচ্য বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা কর

বাংলা ব্যাকরণের পরিধি বা আলোচ্য বিষয় সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, ব্যাকরণে কী কী বিষয় আলোচিত হয়? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
অথবা, একটি পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্যাকরণের কাঠামো প্রস্তুত কর ৷

ব্যাকরণের পরিধি বা আলোচ্য বিষয় : প্রত্যেক ভাষারই তিনটি মৌলিক অংশ থাকে; যথা—

১. ধ্বনি (sound) 
২. শব্দ (word) এবং 
৩. বাক্য (sentence)।

উল্লিখিত তিনটি উপাদানের সঙ্গে আরো একটি উপাদান রয়েছে, তা হলো অর্থ (meaning)। শব্দের অর্থবিচার, বাক্যের অর্থবিচার, অর্থের বিভিন্ন প্রকারভেদ (যেমন—মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ ইত্যাদি) ভাষার মূল গঠন উপাদান হিসাবে বিবেচ্য। অতএব ভাষার মৌলিক অংশ চারটি; যথা—

১। ধ্বনি (sound), 
২। শব্দ (word), 
৩। বাক্য (sentence) এবং 
৪। অর্থ (meaning)। 

ফলে, সব ভাষার ব্যাকরণেই প্রধানত চারটি বিষয়ের আলোচনা করা হয় :

ক. ধ্বনিতত্ত্ব (Phonology)
গ. বাক্যতত্ত্ব (Syntax)
খ. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব (Morphology)
ঘ. অর্থতত্ত্ব (Semantics)

এই চার তত্ত্ব নিয়েই ব্যাকরণের কাঠামো গড়ে উঠেছে। তবে এই কাঠামোর মধ্যে ছন্দ ও অলংকারকে স্থান দেওয়ার পক্ষে কেউ কেউ মত ব্যক্ত করেছেন।

আলোচনা

১। ধ্বনিতত্ত্ব : ধ্বনির উচ্চারণপ্রণালি, উচ্চারণের স্থান, ধ্বনির প্রতীক বা বর্ণের বিন্যাস, ধ্বনিসংযোগ বা সন্ধি, ধ্বনির পরিবর্তন ও লোপ, ণত্ব ও ষত্ব-বিধান ইত্যাদি বাংলা ব্যাকরণে ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় ৷

২। শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব : এক বা একাধিক ধ্বনির অর্থবোধক সম্মিলনে শব্দ তৈরি হয়, শব্দের অর্থযুক্ত ক্ষুদ্রাংশকে বলা হয় রূপ (Morpheme)। রূপ গঠন করে শব্দ। সেই জন্য শব্দতত্ত্বকে রূপতত্ত্বও বলে। এ-অংশে শব্দের ক্রিয়া- প্রকার, পদের পরিচয়, শব্দগঠন, উপসর্গ, প্রত্যয়, বিভক্তি, লিঙ্গ, বচন, ধাতু, শব্দরূপ, কারক, সমাস, প্রকরণ, ক্রিয়ার কাল, ক্রিয়ার ভাব, শব্দের ব্যুৎপত্তি ও অর্থগত পার্থক্য ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা থাকে। 

৩। বাক্যতত্ত্ব : বাক্য, বাক্যের সঠিক গঠনপ্রণালি, বিভিন্ন উপাদানের সংযোজন, বিয়োজন, এদের সার্থক ব্যবহারযোগ্যতা, বাক্যমধ্যে শব্দ বা পদের রূপ-পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় বাক্যতত্ত্বে আলোচিত হয়।

৪। অর্থতত্ত্ব : শব্দের অর্থবিচার, বাক্যের অর্থবিচার, অর্থের বিভিন্ন প্রকারভেদ (যেমন— মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থ ইত্যাদি) অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয় ৷

৫। ছন্দ-প্রকরণ : এ অংশে ছন্দের প্রকার ও নিয়মসমূহ আলোচিত হয়।

৬। অলংকার-প্রকরণ : অলংকারের সংজ্ঞার্থ ও প্রকার ইত্যাদি বিষয় এ-অংশে আলোচিত হয়।

উল্লিখিত বিষয়গুলোর বিস্তৃত আলোচনার মধ্য দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচিত হতে পারে।

সবশেষে বলা যায়, ভাষা পরিবর্তনশীল, ভাষা কখনও এক স্থানে স্থির থাকে না, থাকে না তা একটি নির্দিষ্ট রূপের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে। এতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য ও মাত্রা। ফলে ব্যাকরণের বিষয়বস্তুরও পরিবর্তন এবং বিস্তৃতি ঘটেছে, ঘটছে এবং ঘটবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url