বাংলা রচনা : বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল ধান

বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল : ধান

বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল : ধান

[ রচনা-সংকেত : ভূমিকা—উৎপত্তি স্থান—প্রকারভেদ—চাষ প্রণালি — ধানক্ষেতের দৃশ্য— চাল প্রস্তুত প্রণালি – প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা—উপসংহার। ]

ভূমিকা : ধান বাংলাদেশের প্রধান কৃষিজাত ফসল। বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। আমরা এই ভাত ধান থেকে প্রস্তুত চাল থেকে আহরণ করি। এর অভাবে দেশে হাহাকার পড়ে যায়— দুর্ভিক্ষ ও মহামারি দেখা দেয়। সুতরাং ধানের সঙ্গে আর কোনো কৃষিজাত দ্রব্যেরই তুলনা হতে পারে না।

উৎপত্তি স্থান : পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কমবেশি ধানের চাষ হয়। এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় সবচেযে বেশি ধান উৎপন্ন হয়। আমাদের বাংলাদেশেও প্রচুর ধান জন্মে। তবে শীতপ্রধান দেশে ধান একেবারেই জন্মায় না বললেই চলে। 

প্রকারভেদ : ধান গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় শতাধিক রকমের ধান আছে। এদের মধ্যে বেশিরকম ধানের নাম অনেকেই জানে না। আমাদের দেশে দুই প্রকার ধান প্রত্যেকের কাছেই সুপরিচিত— আউশ (আশু) এবং আমন (হৈমন্তিক)। এছাড়া, ‘বোরো” নামে একধরনের ধানও জন্মে। এ ধানটি উচ্চ ফলনশীল এবং বছরের যেকোনো সময়ই এর চাষ করা যায়। তবে এর জন্য পর্যাপ্ত পানি সেচের প্রয়োজন হয়। এ-ধানটি দরিদ্রের পরম বন্ধু। কারণ অল্প দামে সহজে পাওয়া যায়।

চাষ প্রণালি : বৈশাখ মাসে আউশ ধানের বীজ বপন করতে হয়। শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ধান পাকে এবং কৃষকরা তা কেটে ঘরে তোলে। এ ধান সাধারণত উঁচু জমিতে জন্মে। আমন ধান সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বৃষ্টি শুরু হলেই কৃষকরা জমি চাষ করে ধানের বীজ লাগিয়ে দেয়। আষাঢ় মাসে যখন মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে জমি পানিতে সিক্ত হয় তখন কৃষকরা ওই ধানের চারা অন্য কর্ষিত জমিতে পুনরায় রোপণ করে। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ধান পাকলে কৃষকরা ওইগুলো কেটে আঁটি বাঁধে। আঁটিবাঁধা ধান তুলে এনে গাদা করা হয়। অতঃপর আঁটিগুলো আছড়ে ধান পৃথক করা হয়। আর বোরো ধান পৌষ মাসে রোপণ করে বৈশাখ মাসে কাটা হয়।

ধানখেতের দৃশ্য : ধানের খেত দেখতে বড়ই মনোরম। কচিকচি ধান গাছ যখন শিষ নিয়ে পানির ওপর মাথা তুলে ওঠে, তখন মনে হয়— পৃথিবী সবুজ আস্তরণে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। তারপর আশ্বিন-কার্তিক মাসে ধান পেকে উঠলে সূর্যকিরণে তার সোনালি আভা কী অপরূপই না দেখায়। ধানের খেতের ওপর যখন বাতাসের দোলা লাগে তখন মাঠের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঢেউয়ের শিহরন জাগে। এমন দৃশ্য দেখে কবি মোহিত হয়ে লিখেছেন, “এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে?”

চাল প্রস্তুত প্রণালি : ধান থেকে চাল হয়। চাল দু প্রকারের; যথা— আতপ ও সিদ্ধ। ধান রোদে শুকিয়ে যে চাল বের করা হয়, তাকে ‘আতপ চাল' বলে। আর ধান সিদ্ধ করে ও শুকিয়ে যে চাল বের করা হয় তাকে ‘সেদ্ধ চাল’ বলে। আগে আমাদের গ্রাম-গঞ্জে ঢেঁকির প্রচলোন ছিল। তখন ধান ঢেঁকিতেই ভানা হতো। আজকাল ঢেঁকির স্থান দখল করে নিয়েছে ‘ধানকল'।

প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা : ধান আমাদের অতি-প্রয়োজনীয় ফসল। চাল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের খাদ্য। ধানের কোনো অংশই ফেলার নয়। ধান ঝাড়ার পর শুষ্ক গাছগুলো খড় হিসেবে গো-মহিষাদির খাদ্যরূপে ব্যবহৃত হয়। ধান ভাঙানোর পর খোসাগুলো তুষ হিসেবে জ্বালানিতে কাজে লাগে। তুষের সঙ্গে যে গুঁড়া বের হয় তাকে কুঁড়া বলে। এই কুঁড়া খেয়ে হাস, মুরগি ও গরু-বাছুর পুষ্টিলাভ করে। চাল থেকে ভাত ছাড়া আমরা পোলাও, পায়েস, পিঠা ইত্যাদি খাদ্য তৈরি করে খেয়ে থাকি। চাল আমাদের জীবনে কত প্রকারে ব্যবহৃত হয় এবং কতভাবে উপকার করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

উপসংহার : যে-ধানের ওপর আমাদের জীবন নির্ভরশীল, সেই ধান উৎপাদন এবং তাকে কীট-পতঙ্গের হাত থেনো রক্ষা করার মতো কোনো উন্নত পদ্ধতি বা আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই বললেই চলে। এখনো প্রণালিত্তে সাধিত করার সক্রিয় প্রেরণা ও শিক্ষা পায়নি। তারা প্রদেশের কৃষককুল এখনের উপর নির্ভর করেই কৃষিকারে বৈজ্ঞানিক পরিচালনা করে থাকে। আশার কথা যে, বর্তমানে পুরোনো পদ্ধতির কিছুটা হলেও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধের অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য চাষিরা বিভিন্ন উপায়ে পানি সেচ করে, জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে ক্রমাগত অধিক হারে উৎপাদন করছে। সামগ্রিকভাবে কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের ব্যবস্থা আরো ব্যাপক ও জোরদার হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। এ ব্যবস্থা চালু করতে পারলে ‘অধিক ফসল ফলাও' কথাটির যথার্থ তাৎপর্য প্রমাণিত হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url