উপসর্গ কাকে বলে? বাংলা শব্দগঠনে উপসর্গের ভূমিকা বা গুরুত্ব কী?

উপসর্গ কাকে বলে? বাংলা শব্দগঠনে উপসর্গের ভূমিকা বা গুরুত্ব কী?

উপসর্গ কাকে বলে? বাংলা শব্দগঠনে উপসর্গের ভূমিকা বা গুরুত্ব কী?
অথবা, উপসর্গের বৈশিষ্ট্য বা কাজ কী? বাংলা শব্দগঠনে উপসর্গের ভূমিকা বা গুরুত্ব কী?

উপসর্গ শব্দটির ব্যুৎপত্তি উপ + √সুজ + অ। শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ‘অবাঞ্ছিত বিষয়'। বাংলা ভাষায় যেসব শব্দখত বা শব্দাংশ ধাতুর পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, সেগুলোকে বলে উপসর্গ। যেমন : 'কাজ' একটি শব্দ। এর আগে 'অ' যুক্ত হলে হয় ー অ + কাজ = অকাজ; যার অর্থ নিন্দনীয় বা অপ্রয়োজনীয় কাজ। 

বাংলা শব্দ গঠনে উপসর্গের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপসর্গ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘সংস্কৃত ভাষায় কতকগুলো টুকরো শব্দ আছে যেগুলোর স্বতন্ত্র কাজ নেই, তারা বাক্যের লাইন বদলিয়ে দেয়। 'গত' শব্দে আ উপসর্গ জুড়ে দিলে হয় ‘আগত’, সেটা লক্ষ করায় কাছের দিক; ‘নির’ জুড়ে দিলে হয় ‘নির্গত’, দেখিয়ে দেয় বাইরের দিক; ‘অনু’ জুড়ে দিলে হয় ‘অনুগত’, দেখিয়ে দেয় পিছনের দিক; তেমনি ‘সংগত’, ‘দুর্গত’, ‘অপগত’ প্রভৃতি শব্দে নানা দিকে তর্জনী চালানো। উপসর্গ থাকে সামনে, প্রত্যয় থাকে পিছনে। তারা আছে একই শব্দের নানা অর্থ বানাবার কাজে।”

উপসর্গ যুক্ত হলে সাধারণত শব্দের পাঁচ ধরনের পরিবর্তন ঘটে। যেমন :

১. নতুন অর্থবোধক শব্দের সৃষ্টি হয়। যেমন : ছায়া থেকে প্রচ্ছায়া (গাঢ় ছায়া)।
২. শব্দের অর্থ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমন : পুষ্টি থেকে পরিপুষ্টি (সুপুষ্টতা)।
৩. শব্দের অর্থ সম্প্রসারিত হয়। যেমন : তাপ থেকে প্রতাপ (পরাক্রম), পরিতাপ (মনস্তাপ)।
৪. শব্দের অর্থের সীমা সংকুচিত হয়। যেমন : রাজি থেকে নিমরাজি (অর্ধেক রাজি)।
৫. শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে। যেমন : কথা থেকে উপকথা (কল্পিত গল্প)।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, উপসর্গ শব্দ গঠনের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া। যদিও উপসর্গের নিজের কোনো অর্থ নেই; কিন্তু অন্য অর্থপূর্ণ শব্দের আগে বসে নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে এবং একাধিক নতুন অর্থের দ্যোতন সৃষ্টি করে। ফলে বাংলা ভাষায় যেমন শব্দভান্ডার বৃদ্ধি পায়, তেমনি নানা ভাব ও আবেগ প্রকাশে নতুন নতুন শব্দ গঠনে সহায়তা করে। সর্বোপরি, ভাষার সৌন্দর্য, মাধুর্য, সাবলীলতা ও গতিশীলতা সৃষ্টিতে উপসর্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url