বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক প্রবণতা বিষয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন রচনা কর

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক প্রবণতা বিষয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন রচনা কর

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক প্রবণতা বিষয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন রচনা কর।

তাসিন : কীরে তুই এখনো রেডি হসনি? আমাদের তো দশটায় যাওয়ার কথা, এখন এগারোটা বেজে গেছে । 

ইনসাদ : তুই তো ঘেমে চুপসে গেছিস । কথা পরে শুনব। এদিকে আস, পাখার নিচে বস ।

তাসিন : আর বলিস না। রাস্তায় জ্যাম, হেঁটে আসতে হয়েছে । তার ওপর গরম তো আছেই । বাইরে আগুন জ্বলছে, মনে হয় আগুনের তাপ নিতে নিতে হেঁটে এসেছি ।

ইনসাদ : এ-কারণেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজ আর বাইরে বের হব না । তুই লক্ষ করেছিস— গত কয়েক বছর ধরে গরমকালে যেমন অস্বাভাবিক গরম, তেমনি শীতকালেও শীতের তীব্রতা । কোনো ঋতুই ঠিক সময়ে আসছে না । যখন বৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন তখন বৃষ্টি নেই, যখন ঘূর্ণিঝড় হওয়ার কথা নয় তখন ঝড়- বৃষ্টি। আজকাল ভূমিকম্পেরও প্রকোপ দেখা দিয়েছে ।

তাসিন : প্রকৃতির এই বিরূপ আচরণ কেন বলতে পারিস?

ইনসাদ : তুই বল।

তাসিন : তুই যা যা বলেছিস সেগুলোর কারণ হলো— বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন। দেখছিস না অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, সাইক্লোন, বন্যা, সুনামি, ভূমিকম্প- প্রায় সারা বছরই কোনো-না-কোনো দুর্যোগ লেগেই থাকে।

ইনসাদ : কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কে বা কী বলতে পারিস?

তাসিন : হ্যাঁ, বিভিন্ন কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন হতে পারে। যেমন— বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসারণ, গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া, নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস প্রভৃতি কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে।

ইনসাদ : এভাবে চলতে থাকলে তো পৃথিবী একসময় প্রাগৈতিহাসিক কালের মতো ধ্বংস হয়ে যাবে। বিপন্ন হবে সকল সৃষ্টিকুল।

তাসিন : একদম ঠিক বলেছিস। পরিবেশ মানব সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানুষের রচিত পরিবেশ তারই সভ্যতার বিবর্তন ফসল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানের বিজয় গৌরবে মোহান্ধ মানুষ পৃথিবীর পরিবেশকে বিষাক্ত করছে। ছড়িয়ে দিয়েছে ক্ষতিকর সব আবর্জনা ও বিষাক্ত গ্যাস। তার ফল হয়েছে  বিষময়। দূষিত পরিবেশ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। তাই গোটা জীবজগতের অস্তিত্বই আজ বিপন্ন।

ইনসাদ : আমি এখন বুঝতে পেরেছি। প্রতিনিয়ত পৃথিবীর তাপমাত্রা অধিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ুর  স্বাভাবিক চরিত্রে পরিবর্তন ঘটছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত বিষয়টি ‘বিশ্ব বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন' অভিধায় ভূষিত ।

তাসিন : জলবায়ু পরিবর্তন তথা বিশ্ব উষ্ণায়নের একটি সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিণতি হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। উপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের পানির উত্তাপ বৃদ্ধি পাবে এবং পানি সম্প্রসারিত হয়ে সমুদ্রের আয়তন ও পরিধিকে বাড়িয়ে তুলবে। উষ্ণায়নের ফলে পর্বতচূড়ায় জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রের পানির পরিমাণ বাড়াবে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত এলাকার পরিমাণ যেমন বাড়বে তেমনি পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে বড়ো বড়ো শহর।

ইনসাদ : জলবায়ুর পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বন্যা, খরা, নদীপ্রবাহের ক্ষীণতা, পানিতে লবণাক্ততা, সাইক্লোন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙনসহ নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জনবিপর্যয় ঘটবে। 

তাসিন : আমি পত্রিকায় পড়েছি— বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই এশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এশিয়া মহাদেশের ১৩০ কোটি অধিবাসী হিমালয় পর্বতমালার হিমবাহগুলো থেকে সৃষ্ট পানির উৎসের ওপর নির্ভরশীল।

ইনসাদ : বিশ্বব্যাপী যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে অন্যতম স্থানে। কোপেনহেগেন সম্মেলন ২০০১-এ বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মসূচি বাবদ ৭০,০০০ কোটি টাকার সহযোগিতা চেয়ে প্রকল্প বা কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ ভাগ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বা হবে।

তাসিন : জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে জটিল সমস্যা যা সকল গরিব দেশকে প্রভাবিত করছে ব্যাপকভাবে। তাই এবিষয়ে এখনই নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

ইনসাদ : একদম ঠিক বলেছিস। মানুষের আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের জন্য পৃথিবী আজ ধ্বংসের মুখে। এখন থেকে মানুষ যদি সচেতন না হয় তবে পতন অনিবার্য।

তাসিন : আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও আমাদের সতর্ক হতে হবে।

ইনসাদ : হ্যাঁ মানুষই শুধু পারে এ পৃথিবীটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে। এখন থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমাদের পৃথিবী আবার সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠবে। 

তাসিন : আমাদের পৃথিবীকে আমাদেরই বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। জানো তো-

' মানবের পৃথিবী দ্বিতীয়টি নেই, 
মানুষের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। '

ইনসাদ : বাহ্! বেশ সুন্দর কথা তো। তোমার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমিও বলতে চাই- 

' আমাদের পৃথিবী গড়িয়া লইব আপনার করে 
নিত্য-জীবনে সাজাই পৃথিবী মানবের তরে। '

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url