তোমার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনের একটি দিনলিপি রচনা কর
তোমার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনের একটি দিনলিপি রচনা কর।
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনের একটি দিনলিপি
৭ মে ২০২৪, রবিবার
রাত ১১টা
মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছু দিন পরে আমি চলে এসেছিলাম বড়ো আপার বাসায়। তা অবশ্য বেড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়, আপা ঠিক করে রেখেছিলেন পরীক্ষার পরে আমি কম্পিউটার ও ‘স্পোকেন ইংলিশ'-এর ওপর দু মাসের একটা কোর্স করব। আমিও আগ্রহ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। সুতরাং নিয়মিত ক্লাস করতে গিয়ে এতটাই মনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম যে এসএসসির ফল নিয়ে ভাববার কোনো অবকাশ পাইনি। তাছাড়া ছোটোবেলা থেকেই আমি শ্রেণিপরীক্ষায় কখনো দ্বিতীয় হইনি। মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পরিবারে এবং স্কুলে সুনাম বজায় রেখেছিলাম বরাবরই। শুধু নির্বাচনি পরীক্ষায় আমি প্রথম তো হতে পারি—ইনি হয়েছিলাম চতুর্থ। তার একটি কারণ ছিল এই যে—বাংলা, ইংরেজিসহ চারটি বিষয়ে নতুনভাবে নোট করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমার কঠোর অধ্যবসায় ছিল ঠিকই কিন্তু নির্বাচনি পরীক্ষার আগে সেভাবে আমি প্রস্তুতিটা নিতে পারিনি বলে একটু হোঁচট খেতে হয়েছিল। কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল স্থির। আমি আমার নতুন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে যতটুকু লেখাপড়া করেছি তা থেকেই পরীক্ষা দিয়েছি। খুব বেশি নম্বরের ব্যবধানে যে আমি চতুর্থ হয়েছি তা কিন্তু নয়। প্রথম স্থান যে অধিকার করেছে সে আমার থেকে মাত্র তেরো নম্বর বেশি পেয়েছিল। সে যাক, আমি গোল্ডেন এ+ অর্জন করব এতে আমার মনে কোনো প্রকার সংশয় কাজ করেনি। নিয়মিত ও অধ্যবসায়ী ছাত্র হিসেবে স্কুল শিক্ষক ও পরিবারের আশা তেমনটিই ছিল। যদিও নির্বাচনি পরীক্ষার ফল দেখে সবাই কিছুটা হতাশ হয়েছিল। আমি বিষয়টা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলাম। এ নিয়ে আমার মনের ভিতর চাপা একটা বেদনা ও ক্ষোভ ছিল।
ফলপ্রকাশের পূর্ব রাতেই টিভিতে ঘোষণা শুনলাম আগামী দিন এসএসসির ফল প্রকাশ পাবে। আপা বলল সকালেই বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হবার জন্যে। ইতোমধ্যে বন্ধু-বান্ধব এবং বাড়ি থেকে একাধিক ফোন আসল। আমি ভাবলাম ফলাফল জেনে তবেই যাত্রা করব। রাতভর কিছুটা অস্থিরতায় ভোগলাম। ঘুম আসল শেষ রাতে। আমি ছিলাম ঘুমিয়ে। আমার রেজাল্ট নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আপারই ছিল বেশি। আপা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেছে। ইন্টারনেট থেকে আমার পরীক্ষার ফল জানতে তেমন বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু আপা ফল জেনেও থাকলেন চুপ করে। আমাকে ঘুম থেকে ঠিকই জাগালেন কিন্তু কিছু বললেন না। আমার হাতে একটি পার্কার কলম দিয়ে বললেন, এই ধর তোর পরীক্ষার ফল, তুই গোল্ডেন এ+ পেয়েছিস। আমার চোখে জল এসে পড়ল। জীবনের এই প্রথম আমি বড়ো বোনকে মায়ের শ্রদ্ধা নিয়ে পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। আপা বললেন, আমাদের সবার আশা তুই পূর্ণ করেছিস। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। বাড়িতে মা অস্থির হয়ে আছেন তুই কখন ফিরবি। স্কুল থেকে খবর পাঠিয়েছে, বন্ধু-বান্ধবরাও তোর জন্যে পথ চেয়ে আছে। আমি আর কালবিলম্ব না করে বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করলাম। বাসের জানালা দিয়ে মুক্ত আকাশ দেখছিলাম, শরতের নীল স্বচ্ছ আকাশ। আমার সঙ্গে দ্রুত এগিয়ে চলছে। মুক্ত আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের খেলা চলছে। আমার হৃদয়ে চলছে আনন্দের লুকোচুরি খেলা। সমস্ত পৃথিবীটাকে বড়ো আপন মনে হলো। হঠাৎ করেই যেনো পৌঁছে গেলাম বাড়িতে। বাস থামল নির্দিষ্ট স্টেশনে। তখন দুপুর দুইটা। বাড়িতে পৌঁছতেই মা আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। আমি অশ্রুসজল চোখে মাকে সালাম করে আশীর্বাদ নিলাম। মা-ই আমাকে তাড়া দিলেন দ্রুত স্কুলে গিয়ে স্যারদের আশীর্বাদ নিতে। আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে ইতোমধ্যে বাড়িতে কয়েকজন বন্ধু এসেও হাজির হয়েছিল। আমরা সোজা স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে প্রবেশ করলাম। সকল শিক্ষার্থী এসে ভিড় করল, অন্যান্য স্যারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমাদের স্কুল থেকে মোট বিশজন গোল্ডেন এ+ পেয়েছে। কিন্তু ফলের দিন আমার অনুপস্থিতিটাই যেনো আনন্দের মাত্রাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল।
আমরা সবাই মিষ্টিমুখ করলাম এবং স্যারদের নিয়ে সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠলাম। মাঠে এসে হৈচৈ আর আনন্দ-উৎসবে সবাই মেতে উঠলাম। এসএসসির ফল প্রাপ্তির ঘটনাটি আমার জীবনে অবিস্মরণীয় ঘটনা হিসেবে দিনলিপিতে স্থান করে নিল।