বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারকে কটি গুচ্ছে বিভক্ত করা যায়? উদাহরণসহ বর্ণনা কর
শব্দ বলতে কী বোঝ? উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়? উদাহরণসহ আলোচনা কর।
অথবা, বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারকে কটি গুচ্ছে বিভক্ত করা যায়? উদাহরণসহ বর্ণনা কর।
শব্দ : শব্দ বস্তু বা ভাবের দ্যোতক। এক বা একাধিক ধ্বনির সমন্বয়ে তৈরি অর্থবোধক ও উচ্চারণযোগ্য একককে শব্দ বলা হয়। শব্দ স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং অভিধানে স্থান পায়। যেমন : বই, খাতা, কলম, চাঁদ, বাবা, উচ্চারণ, ব্যবহার— এ সবই শব্দ। শব্দ দিয়েই বাক্য তৈরি হয় এবং বাক্যস্থিত শব্দের নাম পদ।
ভাষাতাত্ত্বিক ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘অর্থযুক্ত ধ্বনিকে বলে শব্দ (Word)। কোনও বিশেষ সমাজের নরনারীর কাছে যে-ধ্বনির স্পষ্ট অর্থ আছে, সেই অর্থযুক্ত ধ্বনি হচ্ছে, সেই সমাজের নরনারীর ভাষার শব্দ।'
উৎপত্তি অনুসারে শব্দের শ্রেণিবিভাগ : উৎস বা উৎপত্তি বা ব্যুৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
২. তৎসম শব্দ,
৩. অর্ধ-তৎসম শব্দ,
৪. দেশি শব্দ এবং
৫. বিদেশি শব্দ ।
১। তদ্ভব শব্দ : তদ্ভব একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ, ‘তৎ’ (তার) থেকে ‘ভব’ (উৎপন্ন); অর্থাৎ সংস্কৃত থেকে উৎপন্ন শব্দ। যেমন : সংস্কৃতে ছিল ‘চন্দ্র’, প্রাকৃতে হয় ‘চন্দ’, বাংলায় হয়ে গেল ‘চাঁদ’।
সুতরাং যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের তদ্ভব শব্দ বলে। যেমন : হস্ত > হথ > হাত; চন্দ্ৰ > চন্দ > চাঁদ; সৰ্প > সম্প > সাপ ইত্যাদি।
২। তৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে অবিকৃতভাবে অর্থাৎ পরিবর্তন ছাড়া বাংলা ভাষায় এসেছে তাদের ‘তৎসম শব্দ' বলে। তৎসম একটি পারিভাষিক শব্দ। এর অর্থ- ‘তৎ' অর্থাৎ ‘তার’ বলতে বোঝায় ‘সংস্কৃত’ (এখন বলি প্রাচীন ভারতীয় আর্য) ভাষাকে, আর ‘সম’ অর্থ সমান। অর্থাৎ তৎসম (তৎ + সম) বা ‘তার সমান' বা সংস্কৃতের সমান বা সংস্কৃত। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, জল, পৃথিবী, বৃক্ষ ইত্যাদি।
৩। অর্ধ-তৎসম শব্দ : যেসব শব্দ সংস্কৃত থেকে কিঞ্চিৎ বিকৃতভাবে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, তাদের অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন : নিমন্ত্রণ > নেমন্তন্ন, গাত্র > গতর, জ্যোৎস্না > জোছনা ইত্যাদি।
৪। দেশি শব্দ : বাংলাদেশের আদিম অধিবাসীদের (যেমন : তামিল, কোল প্রভৃতি) ভাষার কিছু কিছু শব্দ বাংলায় রক্ষিত হয়েছে। এসব শব্দকে দেশি শব্দ নামে অভিহিত করা হয়। যেমন : কুলা, গঞ্জ, চোঙা, টোপর, ডাব, ডাগর, ডিঙা ইত্যাদি।
৫। বিদেশি শব্দ : রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সংস্কৃতিগত ও বাণিজ্যিক কারণে বাংলাদেশে আগত বিভিন্ন ভাষী মানুষের বহু শব্দ বাংলায় এসে স্থান করে নিয়েছে। এসব শব্দকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। বাংলায় প্রবেশ করেছে ফারসি শব্দ, ঢুকেছে আরবি শব্দ, ঢুকেছে পর্তুগিজ, ফরাসি, ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার শব্দ। যেমন :
ফারসি শব্দ : কারখানা, খোদা, চশমা, ফেরেশতা ইত্যাদি।
ইংরেজি শব্দ : কলেজ, টিন, নোট, পাউডার, পেন্সিল ইত্যাদি।