পুরোনো বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের একটি দিনলিপি রচনা কর
পুরোনো বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের একটি দিনলিপি রচনা কর।
পুরোনো বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের একটি দিনলিপি
রাত ১০টা
বহুদিন পর আজ দেখা মিঠুর সঙ্গে। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট শেষে কোথায় যে হারিয়ে গেল। আর কোনো খবর পেলাম না তার। কোথায় কোন কলেজে ভর্তি হয়েছে, দিনকাল কেমন কাটছে এসবের কিছুই আমি জানি না। যদিও খুব বেশিদিন হয়নি তবু আমাদের বন্ধুত্বটা এতটাই গাঢ় ছিল যে, একটা দিনকেই অনেকদিনের গল্প বলে মনে হয়। মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম ময়মনসিংহে। মামাতো ভাই তপুর সাথে বিকেলে রাস্তায় হাঁটছিলাম, এমন সময় হঠাৎ মিঠুর দেখা মিলল। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, আমার সামনে মিঠু দাঁড়িয়ে আছে। তার অবস্থাও আমার মতোই। কিছুক্ষণ আমরা দুজনই কথা বলতে পারলাম না। ফিরে পেয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলাম। সেই যে পরীক্ষার ফলাফলের দিন সাক্ষাৎ হলো, তারপর আজই প্রথম। কিছু না বলে চলে এলেও মিঠুর ওপর আমি রাগ করে থাকতে পারলাম না। শুনলাম সে এখানকার কলেজে ভর্তি হয়েছে। ওর বাবার চাকরিতে বদলি হওয়ার সুবাদে এখানে চলে আসতে হয়েছে। আমি এখন কী করছি তা জানতে চাইল মিঠু। বললাম যে, আমি সেখানকারই একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি। ছুটি পেয়ে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। মিঠুর সাথে তপুর পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারপর তিনজনে মিলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে সারা বিকেল ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে বসে আড্ডা দিলাম। নদীর জলস্রোত বয়ে যাওয়ার মতোই অনেকগুলো দিন বয়ে গেছে আমাদের দুজনার জীবন থেকে। আজও বয়ে যাচ্ছে। নদীর মতো বয়ে যাওয়াই যেন জীবনের ধর্ম। নিমিষেই যেন কেটে গেল বিকেলটা। আরো কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটাতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু নদীর জলের মতো সহজ নয় জীবনের পথ। বাস্তবতার গতিপথ নদীর গতিপথ থেকেও জটিল ও বক্র।
হাত ধরাধরি করে হাঁটছিলাম একসঙ্গে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বিদায় নিলাম দুজনে দুজনার কাছ থেকে। জোড় হাত দুটি নীরবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল পরস্পরের বন্ধন থেকে। আমি টের পেলাম কিন্তু হাসিমুখে বিদায় নিলাম। খণ্ড-সময়ের ঘটনা হয়েও জীবন—খাতায় ঘটনাটি চিরকালীন হয়ে রইল।