পরীক্ষায় দুর্নীতি ও প্রতিকার সম্পর্কে একটি সেমিনারে উপস্থাপনের লক্ষ্যে একটি মঞ্চ ভাষণ তৈরী কর

পরীক্ষায় দুর্নীতি ও প্রতিকার সম্পর্কে একটি সেমিনারে উপস্থাপনের লক্ষ্যে রচিত ভাষণ

পরীক্ষায় দুর্নীতি ও প্রতিকার সম্পর্কে একটি সেমিনারে উপস্থাপনের লক্ষ্যে রচিত ভাষণ । 

মান্যবর সভাপতি, সম্মানিত প্রধান অতিথি ও উপস্থিত সুধীমণ্ডলী আসসালামু আলাইকুম ।

আমাদের দেশে সমাজের সর্বস্তরেই কিছু কিছু দুর্নীতি চোখে পড়ে। আফিস-আদালতে, ব্যবসায়-বাণিজ্যে, রাস্তা- ঘাটে সর্বত্রই কিছু চরিত্রহীন লোক দুর্নীতি করে থাকে। ঠিক একই নিয়মে ছাত্রদের মধ্যেও কিছু দুর্নীতিপরায়ণ ছাত্র দেখা যায়। যারা পরীক্ষা পাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি করে থাকে। আবার কেউ কেউ উচ্চ নম্বর প্রাপ্তি কিংবা ভালো রেজাল্ট করার জন্য করে থাকে। পরীক্ষায় দুর্নীতি অতি পুরনো কথা হলেও বর্তমান বছরগুলোতে এর মাত্রা চরম সীমানা স্পর্শ করেছে। কতিপয় ছাত্রছাত্রীদের এ হীন প্রচেষ্টা গোটা ছাত্রসমাজকে কলঙ্কিত করে ফেলছে। এতে শুধু ছাত্র সমাজ নয়, গোটা জাতির ভাগ্যে অশনি সঙ্কেতের সৃষ্টি করেছে যা বেদনাদায়ক ও হতাশাব্যঞ্জক ।

প্রিয় সুধী,

আমরা জানি শিক্ষা শুধু পরীক্ষা পাসের জন্য নয়, শিক্ষা হচ্ছে মনুষ্যত্বের বিকাশ এবং আত্মার তুষ্টি ও পুষ্টি সাধনের মাধ্যমে জীবনের বিভিন্নমুখী সমস্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো যোগ্যতা অর্জন করা। জগৎ ও প্রকৃতির পটভূমিকায় জীবনের বিকাশকে বিস্তারিত করে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করা বড় কঠিন সংগ্রাম। এ জন্য সবাইকে ছেলেবেলা থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে পাঠগ্রহণ ও পদ্ধতিগতভাবে বিভিন্ন স্তর অতিক্রমের পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি নানা কারণে স্কুল- কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পরীক্ষা এক নিদারুণ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। কিছু কিছু ছাত্র বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি করে শিক্ষাক্ষেত্রকে কলঙ্কিত করে চলছে। আর সংবাদপত্রের মাধ্যমে এসব তথ্য দেশ বিদেশ পৌঁছে যাচ্ছে এবং আমাদের ছাত্রছাত্রীদের আচার-আচরণ সাধারণে পরিস্ফুট হচ্ছে।

সুধীবৃন্দ, 

পরীক্ষার্থীরা যেহেতু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে- তাই অতি সহজে তাদের উপর সকল দোষ চাপিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে দোষমুক্ত হতে চান। নিরপেক্ষভাবে চিন্তাভাবনা করলে বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে। অনেকেই দুর্নীতির কারণ খোঁজেন। তারা বলতে চান শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি, প্রশ্নপত্র প্রণয়নের পদ্ধতি, পরীক্ষা পদ্ধতি ইত্যাদি ছাত্রদের পরীক্ষায় দুর্নীতির কারণ। কিন্তু আসলে বিষয়টি সম্পূর্ণ অর্থে সঠিক নয়। কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র নিম্নলিখিত প্রক্রিয়ায় পরীক্ষায় দুর্নীতি করে চলছে। কেউ পরীক্ষার হলে নকল করে। কতিপয় অসৎ পরীক্ষকদের দ্বারা নম্বর বাড়িয়ে এবং অসৎ নিরীক্ষক ও বোর্ড কর্মচারীদের দ্বারা নম্বর বাড়িয়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে অভিভাবক ও কিছু সংখ্যক শিক্ষকের আনুকূল্যও লাভ করতে সমর্থ হয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে শুধু ছাত্ররাই এ জন্য দায়ী নয়। অভিভাবক, শিক্ষক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তারাও এজন্য দায়ী।

সুপ্রিয় ভাই ও বোনেরা, 

আজ দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হচ্ছে, যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে দেশের নেতৃত্ব দেবে তারাই আজ বিভিন্নভাবে পরীক্ষায় দুর্নীতি করে দেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দেশ চায় মেধাবী লোক, জ্ঞানী লোক। আর পরীক্ষা হলো মেধা যাচাইয়ের উপযুক্ত মাধ্যম। সেহেতু পরীক্ষাকে সকল প্রকার দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। যেসব বিষয়ে ত্রুটি আছে তার সংশোধন করতে হবে। অভিভাবকদেরকে নকলের কুফল সম্পর্কে ছাত্রদের অবহিত করতে হবে। শিক্ষকেরাও এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল ধরা পড়লে কোন শিক্ষক যদি কোন ছাত্রের প্রতি স্বজনপ্রীতি দেখায়, তাহলে ছাত্রে'র সাথে সাথে শিক্ষককেও বহিষ্কার করতে হবে। তাহলে শিক্ষকগণও এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। এককথায় নকলের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এসব যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়, তবেই হয়ত পরীক্ষা দুর্নীতিমুক্ত হবে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় পরীক্ষা দুর্নীতিমুক্ত হোক, গোটা দেশ ভরে উঠুক যোগ্য লোকে এই কামনায় আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।

সকলকে ধন্যবাদ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url