ভাব-সম্প্রসারণ : প্রৌঢ়ত্ব প্রদর্শনের বিষয় নয়, লুকোবার বিষয়
প্রৌঢ়ত্ব প্রদর্শনের বিষয় নয়, লুকোবার বিষয়
ভাব-সম্প্রসারণ : মহাকালের খুব সামান্য সময় মানুষের আয়ুষ্কাল । প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষের জন্ম-মৃত্যু সংগঠিত হয়। প্রৌঢ় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম-মৃত্যুর মধ্যে মানবজীবনের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। মানবশিশু জন্মের পর শৈশব, কৈশোর, যুবক, ও বৃদ্ধ হয় পর্যায়ক্রমে। তাই বলা যায়, অনন্ত কালপ্রবাহে মানুষের জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। প্রসঙ্গত, ইংরেজি প্রবাদটি প্রণিধানযোগ্য— Man does not live in years but in deeds.' মানুষ মরণশীল বলে একসময় এই পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করতে হয়। জীবনের এই পরিণতিকে অগ্রাহ্য করা কারও পক্ষে সম্ভব নয় । অবশ্যম্ভাবী এই পরিণাম জেনেও মানুষ পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে, তার রূপে মুগ্ধ হয়ে আমৃত্যু বেঁচে থাকতে চায় । বেঁচে থাকার মধ্যে কোনো পাগলামি নেই কিন্তু স্থির থাকার মধ্যে রয়েছে বোকামি। স্নেহ-প্রেম ভালোবাসাপূর্ণ এই জগৎ সংসারের মায়াময় পরিবেশ ছেড়ে চিরদিনের জন্যে চলে যেতে হবে বলেই এর প্রতি মানুষের ভালোবাসাও প্রবলতর। বিধাতার আনন্দের ফল এই পৃথিবী এর সৌন্দর্য ও মায়া জীবনকে এত বেশি আকর্ষণ করে এবং হৃদয়কে এত বেশি অভিভূত করে যে, সবসময়ই মানুষের কণ্ঠে শোনা যায় এর প্রতি মমত্ববোধের অকৃত্রিম উচ্চারণ। নশ্বর এই পৃথিবীতে প্রতিটি বস্তুর ক্ষয় বা বিনাশ অনিবার্য। মানুষ তার স্বরূপকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করতে পারে । কিন্তু এক জায়গায় ধরে রাখতে পারে না। আর তা ধরে রাখতে গেলে কদাকার রূপটিই ফুটে ওঠে। প্রকৃতির দিকে যখন আমরা তাকাই তখন অনেক কঠিন সত্য উপলব্ধি করতে পারি। সূর্য যখন অস্ত যায়, পৃথিবী তখন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। মানবজীবনেও প্রৌঢ়ত্ব এলে বিদায়ের সুর বেজে ওঠে। সীমাবদ্ধ জীবনের অবসান ঘটিয়ে মানুষকে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়ি । পেছনে পড়ে থাকে তার কর্মময় জীবন। মানুষের কীর্তিকলাপের মাধ্যমেই তার জীবনের গৌরব ঘোষিত হয়। কর্মের মাধ্যমে একজন মানুষ অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে এবং তার জীবন যথার্থ সার্থকতার দাবিদার । কিন্তু যে মানুষের জীবনে প্রৌঢ়ত্ব এসেছে অথচ জীবন কর্মময় নয়, সে জীবন প্রদর্শন নয় বরং লুকিয়ে রাখাই ভালো ।