বাংলা ভাষার বৈশ্বিক অবস্থান ও গুরুত্ব বর্ণনা করুন

বাংলা ভাষার বৈশ্বিক অবস্থান ও গুরুত্ব বর্ণনা করুন

বাংলা ভাষার বৈশ্বিক অবস্থান ও গুরুত্ব বর্ণনা করুন ।

ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হলো সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য, বহুভাষাভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করে না, তা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুধাবন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অবদান রাখে। হাজার বছরের পথ পরিক্রমায় বিভিন্ন ভাষা গোষ্ঠীর বৈরীতা, আগ্রাসন ও নিষ্পেষণে বাংলা ভাষা সংগ্রাম করেছে। বিলুপ্তির ভয়াবহ আশঙ্কা থেকে নিজেকে রক্ষা করে ক্রমেই তার চলার গতিকে শক্তিশালী করেছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার পরীক্ষিত শক্তি বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। তার আগে বাংলা ভাষার প্রথম পরিচয় ঘটে ১৯১৩ সালে বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘভুক্ত সকল রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের কাছে বাংলা ভাষা নতুন করে আগ্রহ ও কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এ বছর ২৩ সেপ্টেম্বর বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে এ ভাষার মর্যাদাকে আরো উন্নত স্তরে পৌঁছে দেন। ফলে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষার একটি পরিচিতি বলয় তৈরি হয়। বাংলা ভাষার প্রণোদনা শক্তির বলে ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউনেস্কোর এ স্বীকৃতির মূল কারণ ও উৎস ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা প্রীতি ও তার মর্যাদা রক্ষায় বাঙালি জাতির আত্মদান। বাঙালির আত্মত্যাগে আজ সারাবিশ্বের মধ্যে মাতৃভাষা প্রীতি সঞ্চার বেড়েছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষা আজ এক সুমহান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত । বিশ্বের মানুষের আগ্রহ বেড়েছে বাংলা ভাষা ও তার ইতিহাসের দিকে। বাংলা ভাষায় শিক্ষা-গবেষণা এখন বিশ্বময়। বাংলা ভাষা শিক্ষাদান ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, লালন সাঁই, চর্যাপদ, মধ্যযুগের সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণা হচ্ছে। এভাবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলা ভাষার গুরুত্ব দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url