জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির একটি ভাষণ তৈরি কর।
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, উপস্থিত সুধীবৃন্দ ও ছাত্রছাত্রীরা, আচ্ছালামু আলাইকুম ।
প্রথমেই আমি এ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের কৃতজ্ঞতা জানাই এই বলে যে, আমার মতো দীন ব্যক্তিকে এই অনুষ্ঠানের অতিথির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সামান্য শিক্ষক মাত্র। দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকতার সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এই বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতার সঞ্জয় অবশ্যই আমার আছে। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের ছাত্র, শিক্ষক ও অতিথিবৃন্দের বক্তব্য আমি মন দিয়ে শুনেছি। প্রত্যেকেই অত্যন্ত মূল্যবান ও জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রেখেছেন, ছাত্র-ছাত্রীরাও তাদের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেছে। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত যা বলবার তা ব্যক্ত করতে চাই—
সক্রেটিসের অমর বাণীর কথা আমরা সবাই জানি। তিনি বলেছিলেন, "Know thyself" অর্থাৎ নিজেকে জানো। নবী হযরত মোহাম্মদ (স)- এর কাছে প্রথম যে বাণী এসেছিল তা হলো—“পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং কলমের মাধ্যমে জ্ঞান দান করেছেন।” হাদিসেও বর্ণিত আছে, “দোলনা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি নরনারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ, তা যদি সুদূর চীন দেশে গিয়েও করতে হয়।” এসবেরই একটি অর্থ - জ্ঞানার্জন করতে হবে। নিজেকে ও অন্যকে চিনতে হবে। আমরা বাল্য বয়স থেকে যৌবন কালের একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্জন করে থাকি ।
এই শিক্ষা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যা অনেকখানি এখন সার্টিফিকেটধর্মী শিক্ষা। শিক্ষাঙ্গনের চার দেয়ালের মধ্যে আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি তা আমাদের সম্পূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে না। যাকে আমরা খণ্ডিত শিক্ষা বলতে পারি। সেখানে আমরা বন্দিত্বের মধ্যে শিক্ষার্জন করি বলে, তা সম্পূর্ণ সুচারু হয়ে ওঠে না। যদি আমরা উন্মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষার্জন করতে পারতাম, তবে সে শিক্ষা আমাদের প্রকৃতই শিক্ষিত করে তুলতো।
আমার দীর্ঘ দিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় দেখতে পাচ্ছি, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা যেন প্রকৃত জ্ঞানার্জন করছে না। তারা পাঠ্যপুস্তকের গুটিকয়েক জিনিস মুখস্থ করে এবং পরীক্ষার সময় উত্তরপত্রে তা উগরে দিয়ে আসে। নিজস্ব চিন্তা-চেতনার কোনো বিকাশ সেখানে দেখতে পাইনে। ইদানীং তারা মূল বইও পাঠ করে না। বাজারের গাইড নামের বিভিন্ন তৈরি প্রশ্নোত্তর আত্মস্থ করে নইলে ফটোস্ট্যাটের কল্যাণে হাতের মুঠোয় করে নকলনবিশী পন্থায় উত্তরপত্র ভরে দেয়। তার ফল যা হবার তা আমরা দেখতেই পাচ্ছি। সার্টিফিকেটধারী কিছু যুবক-যুবতী প্রতিবছরই বেরিয়ে আসছে। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত জ্ঞানবান কোন মানুষকে তৈরি হতে দেখছি না।
আমরা প্রতিবছর যে হাজার হাজার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষিত মানুষকে পাচ্ছি তারা কি স্বশিক্ষিত? আমি বলতে চাইছি তারা কি প্রকৃতই কিছু জ্ঞানার্জন করে বেরিয়ে আসছে। আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের জ্ঞান দিন দিন সীমাবদ্ধ হয়ে আসছে। বুদ্ধি আড়ষ্ঠ হয়ে আসছে দিনকে দিন। মুক্ত মনের স্বাধীন নির্ভীক কোনো মানুষকে আমরা পাচ্ছি না। এ কারণেই সর্বত্রই নেতৃত্বের শূন্যতাকে দেখতে পাচ্ছি। আমরা দেখতে চাই সেই মানুষকে, যে আত্মবিশ্বাসে বলতে পারে—
“জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ” ছাত্র-ছাত্রীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ। মৌলিক কিছু শিক্ষা তারা এ থেকে অর্জন করতে পারে । কবিতা আবৃত্তি, কবিতা, গল্প-প্রবন্ধ রচনা, সঙ্গীত চর্চা প্রভৃতি সপ্তাহব্যাপী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা নিজেকে বুঝবার মূল্যায়ন করবার সুযোগ পেয়েছে। এ থেকেই প্রকৃতই মানুষ হয়ে উঠবার কিছু মন্ত্র তারা অবশ্যই পাবে। সপ্তাহব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক এই অনুষ্ঠানে অনেক ছাত্রছাত্রী অংশগ্রহণ করেছে। তাদেরকে বলি, তারা সবাই হয়তো কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেনি। সে জন্য যেন তারা দুঃখবোধ না করে, অংশগ্রহণই বড় কথা, যে বড় বীর সে পরাজয়কে হজম করতে পারে এবং পরবর্তীতে জয়ের জন্য চেষ্টা করে। কেন কাঙ্ক্ষিত বিজয় এলো না সে দুর্বলতাটুকুও খুঁজে বের করতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যতে একদিন বিজয় আসবে। যারা কৃতিত্ব অর্জন করেছে তাদেরকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। তোমরা দেশের কৃতী সন্তান। ভবিষ্যতে যেন তোমরা আরো বেশি কৃতিত্ব অর্জন করতে পারো সেই দোয়া করি।
সবার উদ্দেশ্যে বলি, এতক্ষণ ধৈর্য সহকারে আমার সাধারণ এই বক্তব্য শুনতে হয়তো আপনারা বিরক্ত হয়ে উঠেছেন। আমার কোন কথা আপনাদের বিরক্তি উৎপাদন করে থাকলে অবশ্যই তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরিশেষে বলি, আমাকে এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে কিছু বলার সুযোগ দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।