বাংলা রচনা : বাংলাদেশের ফুল
বাংলাদেশের ফুল
[ রচনা সংকেত : ভূমিকা, ফুলের প্রতি ভালোবাসা, বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফুল, গ্রীষ্মকালীন ফুল, বর্ষাকালীন ফুল, শরৎকালীন ফুল, হেমন্তকালীন ফুল, শীতকালীন ফুল, বসন্তকালীন ফুল, ফুলের গুরুত্ব, উপসংহার। ]
ভূমিকা : ষড় ঋতুর লীলাক্ষেত্র আমাদের এ বাংলাদেশ। ঋতুচক্রের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়, এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ। ফুলে ফুলে সুশোভিত হয়ে ওঠে এ দেশ। কত রকমের ফুলই না ফোটে এখানে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য, পাহাড় বেষ্টিত সবুজ মেঘলা, অরণ্যময় প্রকৃতি নানা ফুল উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। উত্তরের উচ্চ ভূমি, মধ্যস্থলের সমভূমি এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী বেষ্টিত নিম্ন সমতল ভূমিতে জন্মে কত রং বে-রংয়ের ফুল। এসব ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয় মানুষ, রঙিন প্রজাপতি। মৌমাছিরা মধু আহরণের জন্য ছুটে বেড়ায় ফুলের বনে। নানা রকম বাহারি ফুলের রঙিন সুবাসে মাতোয়ারা হয় চারদিক। রূপ-লাবণ্য ভরা বনভূমিতে থরে থরে সাজানো ফুলগুলো যেন এক অপরূপ স্বর্গীয় আধার। প্রকৃতির এ অপরূপ শোভা দেখে কবি গেয়ে ওঠেন—
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।"
ফুলের প্রতি ভালোবাসা : ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। এমন মানুষ চোখে পড়ে না, যে ফুলকে অপছন্দ করে। বাঙালি ভীষণ ফুলপ্রিয়। প্রিয়জনের সাথে দেখা হলে আমরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা প্রদান করি। বিবাহ উৎসব থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা ফুল ব্যবহার করে থাকি। ফুলকে সত্য এবং সুন্দরের প্রতীক ভেবে তা দিয়ে আমরা বরণ মাল্য সাজাই। শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য আমরা স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, শিখা অনির্বাণ এবং বিভিন্ন সমাধিগাত্রে ফুল নিবেদন করি। ধর্মীয় উৎসবেও ফুল ব্যবহার করা হয়। হিন্দুরা বেদীতে পুষ্প সাজিয়ে প্রতিমার উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করে। এক সময় মেয়েদের রূপ চর্চার একমাত্র উপাদান ছিল এ ফুল। আধুনিক মেয়েরাও রূপ চর্চায় ফুল ব্যবহার করে থাকে। তারা খোঁপায় ফুল গোঁজে। ফুলের মালা বানিয়ে গলায় পরে। একথা বলা যায় যে, আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ফুল একটি বিরাট স্থান দখল করে আছে।
বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ফুল : ছয় ঋতুর পালাবদল হয় এ দেশে। প্রত্যেক ঋতুই নে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। প্রকৃতি প্রত্যেক ঋতুতেই তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফুল উপহার দিয়ে থাকে।
গ্রীষ্মকালীন ফুল : গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে যখন মাঠ-ঘাট, প্রান্তর শুকিয়ে যায়, প্রকৃতিতে যখন বিরাজ করে শুষ্কতা ও মলিনতা, তখন নানা রকম ফুল ফুটে আনন্দ বয়ে আনে। এ ফুলগুলো হলো— কৃষ্ণচূড়া, বেলি, বকুল, করবী ও চাঁপা। কৃষ্ণচূড়া নাম হলেও এ ফুলের রং কালো নয়। তা দেখতে টকটকে লাল। কৃষ্ণচূড়া ফুলের থোকা তার সবুজকে আড়াল করে দেয় এবং তাকে ঢেকে ফেলে। তখন ফুল ছাড়া গাছে আর কিছুই চোখে পড়ে না। বেলী ও বকুল ফুলের মন মাতানো গন্ধে প্রাণ ভরে যায়। বকুল ফুল দিয়ে সুন্দর মালা হয়। করবী ও চাঁপার রয়েছে স্নিগ্ধ সুবাস।
বর্ষাকালীন ফুল : রিমঝিম বর্ষায় ফোটে সুদৃশ্য কদম ফুল। একটানা বৃষ্টিপাতের সময় জানালার ধারে বসে কদম ফুলের গন্ধ নিতে মানুষের মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এসময় জলাশয় কিংবা বিলে ঝিলে ফোটে শাপলা আর পদ্ম ফুল। জল থৈ থৈ বিলে ফুটন্ত শাপলার হাসি দেখলে মনে আর কষ্ট থাকে না। এছাড়া বর্ষাকালে আরও ফোটে জুঁই, কেয়া, কেতকী, কামিনী, কুন্দ প্রভৃতি ফুল। এসব ফুলের অপূর্ব শোভা মনে পবিত্রতা আনে এবং মনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
শরৎকালীন ফুল : বর্ষার পরে আসে শরৎকাল। বাংলার প্রকৃতিতে শরৎ এক নতুন মাত্রা যোগ করে। শরতে কবি মনে নতুন দ্যোতনা সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষের মনও শরৎ প্রকৃতিতে নতুন আনন্দে মেতে ওঠে। কবির কবিতায় শরতের কাশফুল ও স্নিগ্ধ আকাশ বড় হয়ে ধরা দেয়। শরতের প্রকৃতিতে শান্ত ভাব বিরাজ করে। এ ঋতুতে আকাশ প্রায়ই নির্মল থাকে। মাঝে মাঝে সাদাসাদা পেঁজা পেঁজা মেঘগুলো অনন্ত আকাশে ভেসে বেড়ায়। এসময় নদীর জল কমে আসে। নদীর তীরে জেগে উঠে কাশবন। দখিনা বাতাসের মৃদু দোলায় সাদা সাদা কাশফুলগুলো নেচে নেচে এক অপূর্ব সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। শরৎকালেই রাত্রিতে ফোটে শিউলি ফুল। প্রত্যুষে ঝরে পড়া শিউলি ফুলগুলো এক অপরূপ শোভা ধারণ করে।