বাংলা রচনা : কুয়াকাটা সৈকতে একদিন
কুয়াকাটা সৈকতে একদিন
[রচনা সংকেত : ভূমিকা, কল্পনার কুয়াকাটা সৈকত, কুয়াকাটা সৈকতে যাত্রা, সৈকতের অভিজ্ঞতা, দ্বি-প্রহরের বর্ণিল অভিজ্ঞতা, বিকেলের অভিজ্ঞতা, সুর্যাস্তের দৃশ্য, সৈকত থেকে প্রস্থান, উপসংহার।]
ভূমিকা : ভ্রমণ করতে সকলেই ভালবাসে। তা যদি আবার সমুদ্র সৈকতে হয় তবে তো কোন কথাই নেই। কারণ সমুদ্রের প্রতি মানুষের রয়েছে এক দুর্ণিবার মোহ, স্রষ্টার অপূর্ব লীলার এক রহস্য লুকিয়ে আছে সমুদ্রের জলরাশিতে। সমুদ্রের তলদেশের রহস্য অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীদের চলতো প্রতিনিয়ত নানা গবেষণা। সমুদ্র মানুষকে হাসায় আবার কখনো কাঁদায়। কিন্তু তার পরও সমুদ্রের প্রতি মানুষের মোহ কাটে না। আর সে মোহ থেকেই কুয়াকাটা সৈকতের প্রতি আমার একটি আকর্ষণ ক্রমেই বাড়তে থাকে।
কল্পনায় কুয়াকাটা সৈকত : কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমুদ্র সৈকত। কৈশোরেই বই-পুস্তক, শিক্ষক ও বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে কুয়াকাটা সৈকত সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। যে সব কথা শুনে দেহ ও মনে শিহরণ জেগেছে। মনের মানসপটে ভেসে উঠেছে সৈকতের বিশাল বেলাভূমি। যেখানে অসংখ্য মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে অহরহ। তাদের মাঝে আমিও মনের অজান্তে ঘুরে বেড়াই। বালু চর, দূরে সমুদ্র বক্ষে বিশাল জলরাশির ঊর্মিমালা, নির্জন, ক্রমেই তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। কল্পনার সাত রঙে এসব ছবি মনে মনে অনেক এঁকেছি। কিন্তু বাস্তবে কুয়াকাটা সৈকতে যাওয়ার সুযোগ হল অনেক পরে
কুয়াকাটা সৈকতে যাত্রা : বাংলাদেশের অন্যতম একটি সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা দেখতে না পাওয়াটা সত্যিই একটি দুঃখজনক ব্যাপার। ২০০৫ সালে সেখানে আমার প্রথমবার যাওয়ার সৌভাগ্য হল এইচ. এস. সি পরীক্ষার পর। আমেরিকা থেকে আসা বড় আপা ও দুলাভাই সিদ্ধান্ত নিলেন তারা কুয়াকাটা সৈকতে বেড়াতে যাবেন। তাদের সফর সঙ্গী হিসেবে আমাকে নেয়ার জন্য প্রস্তাব করলেন। হাতে প্রচুর সময় ও মনের ইচ্ছা থাকায় আমিও বিনা বাক্যব্যয়ে রাজি হয়ে গেলাম। আগষ্টের মাঝামাঝি সময়ের কোন এক সকালে কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে আমরা কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। শরতের মিষ্টি রোদে আমাদের মাইক্রো এগিয়ে চলল। রাস্তার দুপাশের সৌন্দর্যও আমাদের বিমুগ্ধ করল। দীর্ঘ যাত্রায় মাঝ পথে দু একটি বিরতি ছাড়া মোটামুটি বিকেল ৪ টার দিকে আমরা কুয়াকাটা পৌঁছে গেলাম। সারাদিন ভ্রমণের কারণে সেদিন আর আমরা কোথাও বেড়াতে গেলাম না। সরাসরি আমরা বুকিং দেয়া হোটেলে চলে গেলাম। পরিপাটি হয়ে চা পানের সময় আমরা পরের দিনের কর্মসূচি তৈরি করে নিলাম ।
সৈকতের অভিজ্ঞতা : আমি সকালে কখনোই ঘুম থেকে উঠতে পারতম না। কিন্তু সেদিনই একটি ব্যতিক্রম হল। সকালেই ঘুম ভেঙ্গে যায় সৈকতের টানে। ঝটপট প্রস্তুতিপর্ব সেরে আমরা সৈকতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। সৈকতে পৌঁছে আপা দুলাভাই যখন পূর্ব দিগন্তে সূর্যোদয় দেখছিলেন তখন আমি আমার কল্পনার সাথে বাস্তবের কুয়াকাটা সৈকতকে মেলাচ্ছিলাম। কোনো কোনো বিষয়ে বাস্তবের সাথে কল্পনার চমৎকার সাদৃশ্য দেখে আমি অভিভূত হচ্ছিলাম। পৃথিবীর জল ও স্থলভাগের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণের জন্য নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যাই। সকালের সৈকত কোলাহল পূর্ণ ছিলনা। কেবল পাখি আর সমুদ্রের গর্জনে চারিদিক প্রকম্পিত হচ্ছিল।। তবুও সমুদ্রের মহাকল্লোলের প্রবাহধারার স্নিগ্ধময়তা তিল তিল করে উপভোগ করছিলাম।
দ্বি-প্রহরের বর্ণিল অভিজ্ঞতা : সৈকতে বেড়ানোর সময় এক আকুল ভাবনায় পেয়ে বসল আমাকে। শামুক, ঝিনুক কুড়ানো, বালির উপর আলপনা আঁকা, ক্যামেরায় ছবি তোলা ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় প্রাতঃরাশ করার কথাও ভুলে গিয়েছিলাম। আপা-দুলাভাইয়ের সান্নিধ্য থেকে দূরে সরে ছিলাম ইচ্ছা করেই। কিন্তু বেলা যখন দ্বি-প্রহর তখন প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলাম। ইতোমধ্যে আপা দুলাভাইও আমাকে খুঁজতে শুরু করেছেন। পরে আমরা কাছেই একটি হোটেলে খাওয়ার জন্য ঢুকে পড়ি। বাঁশমতি চালের ভাত ও সামুদ্রিক মাছ দিয়ে আমরা দুপুরের আহারপর্ব শেষ করি। তারপর বালির বিছানায় একটু বিশ্রাম নিয়ে আমরা পুনরায় সৈকতে বিচরণ করতে শুরু করি। দ্বি-প্রহরের সমুদ্র বিচরণে কেবলই ইংরেজ কবি T. S. Eliot - এর কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়ে যায় ।