বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর

বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর

'বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা' বিষয়ে একটি ভাষণ রচনা কর।

বৃক্ষ নেই, প্রাণের অস্তিত্ব নেই,
বৃক্ষহীন পৃথিবী যেন প্রাণহীন মহাশ্মশান ।

'বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা' শীর্ষক আয়োজিত সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় প্রধান অতিথি এবং সুপ্রিয় সুধীবৃন্দ- সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছাসহ সাদর সম্ভাষণ জানাই ।

সুপ্রিয় সুধী
অফুরন্ত সৌন্দর্যের এক মধুময় নিকুঞ্জ আমাদের এ পৃথিবী । আর পৃথিবীকে সবুজে-শ্যামলে ভরে দিয়েছে প্রাণপ্রদায়ী বৃক্ষরাজি । বিশ্বকে সুশীতল ও বাসযোগ্য করে রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য । বৃক্ষই মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন । তাই বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষ না থাকলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ত। তাই বৃক্ষ আমাদের পরম উপকারী বন্ধু । বৃক্ষ আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসা— এই পাঁচ মৌলিক চাহিদা পূরণে যেমন সহায়তা করে তেমনি তার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে আমাদের হৃদয় আপ্লুত হয়ে ওঠে । শুধু কি তাই, পৃথিবী থেকে বিষাক্ত কার্বনডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে এবং অক্সিজেন দিয়ে বৃক্ষই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তাছাড়া বৃক্ষ থেকেই আমরা নানারকম ওষুধ, মোম, মধু, রবার, রজন ইত্যাদি পেয়ে থাকি । তাই বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।

সুধীমণ্ডলী
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, গাছপালা পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে । এতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে । বাতাসে জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে আবহাওয়াকে শীতল করে, ফলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় । তাছাড়া উদ্ভিদরাজি জমির উর্বরতা-শক্তি বৃদ্ধি করে, যা অধিক ফসল উৎপাদনে সহায়ক । সর্বোপরি, বৃক্ষ ঝড়-ঝঞ্ঝা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আমাদের বাসগৃহকে রক্ষা করে । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বৃক্ষের এতসব উপকারী দিক থাকা সত্ত্বেও অজ্ঞতার কারণে এবং সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশের মানুষ নির্দ্বিধায় গাছপালা কেটে বন উজাড় করে ফেলছে । অথচ একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য মোট ভূমির শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন । কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র ১৬ ভাগ বনভূমি রয়েছে, যা দেশের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল । ফলে অকাল বৃষ্টিপাত, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । শুধু কি তাই, বিশ্বপরিবেশে দেখা দিয়েছে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া । বৃক্ষশূন্যতায় জলবায়ুর ওপর সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রভাব, ফলে বিশ্বপরিবেশ আজ বিপর্যস্ত ও হুমকির সম্মুখীন ।

সুধীবৃন্দ
এখন সময় এসেছে সকলের সচেতন হওয়ার । জীবন-মরণের এই প্রশ্নে সমূহ সমস্যা সমাধানকল্পে সবই সম্ভব, যদি আমরা সবাই গাছ লাগাই । বাড়ির চারপাশ, নদীর কিনার, রাস্তার দুপাশ, পাহাড়ের ঢালে, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে । একটি গাছ কাটলে দুটো লাগানোর মানসিকতা তৈরি হতে হবে সকলের মাঝে । বৃক্ষরোপণ কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আবদ্ধ না রেখে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে এবং স্বল্পমূল্যে, প্রয়োজনে বিনামূল্যে জনগণের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করতে হবে । আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বৃক্ষ রক্ষা মানে নিজেদের জীবনকে রক্ষা। তাই বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করার জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসতে হবে । পরিশেষে একটি সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্য সকলেই বৃক্ষদরদি হবেন এবং বেশি বেশি গাছ লাগাবেন এই শুভ আশাবাদ ব্যক্ত করে আমি আমার বক্তব্যের এখানেই ইতি টানছি । আপনাদের সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url