অভিজ্ঞতা বর্ণনা : সাইকেলে ভ্রমণ
সাইকেলে ভ্রমণ
ছোটোবেলা থেকেই আমার সাইকেল চালানোর অভ্যাস। আমার এখনো মনে আছে, আমি যখন ক্লাস টুতে পড়ি তখনই প্রথম সাইকেল চালানো শুরু করি। কিন্তু আমার জন্য ছোটো সাইকেল ছিল না। বাড়িতে একটি বড়ো সাইকেল ছিল। সেটিতেই ফ্রেমের ভেতর দিয়ে পা দিয়ে নিচ দিয়ে সাইকেল চালাতাম। প্রথম চালাতে গিয়ে কত যে পড়েছি তার হিসাব নেই। ব্যথাও কম পাইনি তারপরও ওতেই ছিল অপার আনন্দ। এভাবে চালাতে চালাতে ক্লাস ফোরে পড়া অবস্থায় প্রথম সাইকেলের সিটে বসে চালানোর চেষ্টা করি । প্রথম চেষ্টায় যা হওয়ার তাই হয়েছিল। দুই হাতে হ্যান্ডেল ধরে ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে সিটের ওপর উঠে বসি। কিন্তু প্যাডেল শুরু করার আগেই সাইকেলের গতি থেমে যায়, নেমে পড়তে হয় তাড়াতাড়ি। এভাবে চেষ্টা করতে থাকি। একটু দম বেশি হলে সাইকেলসহ ধপাস করে পড়ে যাই মাটিতে। অনেক সময় সাইকেলের কোথাও কোথাও ক্ষতি হয়ে যেত। এইজন্য বকা ও মার দুটোই হজম করতে হয়েছে অবলীলায়।
তখন আমি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সাইকেল চালানো শিখে গেছি পুরো দুস্তুর। স্কুলেও সাইকেল চালিয়ে যেতাম মাঝে মাঝে । কিন্তু তখনও প্যাডেল পুরোপুরি নাগাল পেতাম না। কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না। মনের মধ্যে ভাব নিয়ে সাইকেল চালাই। রাস্তার মানুষ তাকিয়ে থাকে আমার দিকে । ভাবটা আরও বেড়ে যায় । একই গ্রামের আরও দু-একজন আমার চেয়ে কম অথবা বেশি বয়সী তারাও সাইকেল চালায় । ওদের সঙ্গে কথা হলো, একদিন স্কুলে না গিয়ে সাইকেল চালিয়ে দূরের একটি বাজারে যাব বেড়াতে । বাজার স্কুল থেকে প্রায় ১৪–১৫ মাইল দূরে। কথামতো কাজ— আমরা কোনো একদিন স্কুলে না গিয়ে সেই বাজারের দিকে চলে যাই। প্রথমত আমাদের মধ্যে উদ্দীপনার কমতি ছিল না। কিন্তু রাস্তা শেষ হয় না। দুপুর প্রায় হয়ে আসলো বাজারে পৌঁছতে পারছি না । একজন পথচারীর কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম আর দুই মাইল হবে। আমাদের তখন সব উৎসাহ শেষ । সকলেরই পাগুলো ব্যথা হয়ে এসেছে। প্যাডেলে আর পা পড়ে না। সিদ্ধান্ত হলো সেখান থেকেই বাড়ি ফিরব । এমন সময় যেখান দিয়ে একজন ফেরিওয়ালা যাচ্ছিল। পাউরুটি, বিস্কুট, জিলেপি এসব ছিল। আমাদের কাছে দশ-পনেরো টাকার মতো ছিল, তা দিয়েই আমরা পাউরুটি, বিস্কুট জিলাপি খেলাম। তারপর ফেরার পালা। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে গেছে। সে রাতে শরীর ব্যথা হয়ে আমার প্রচণ্ড জ্বর আসে। প্রায় সাত দিন আর বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। অনেক দিন মাঝখানে কেটে গেছে। কিন্তু সেদিনের সাইকেল ভ্রমণ মন থেকে হারায়নি।