বাংলা রচনা : আমাদের গ্রাম

আমাদের গ্রাম

আমাদের গ্রাম
অথবা, তোমার নিজ গ্রাম
(এই রচনাটি পঞ্চম শ্রেণীর উপযোগী করে রচিত।)

[ রচনা সংকেত: ভূমিকা ; অবস্থান ; জনসংখ্যা ; শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ; প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ;  উপসংহার। ]

ভূমিকা : বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। এদেশের আশি ভাগ লোকই গ্রামে বাস করে। পঁচাশি হাজার গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের একটি গ্রাম করটিয়া। আর এ গ্রামে আমার শৈশব-কৈশোরের সোনালি দিনগুলো কেটেছে। আয়তনের দিক থেকে গ্রামটি খুব বড় না হলেও সুনাম ও ঐতিহ্যের দিক থেকে অনন্য ।

অবস্থান : টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত করটিয়া একটি সুন্দর গ্রাম । জেলা সদর থেকে এ গ্রামের দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। গ্রামটির দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার এবং প্রস্থ প্রায় দুই কিলোমিটার। গ্রামের ভেতর দিয়ে অনেকগুলো প্রশস্ত কাঁচা-পাকা রাস্তা উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম দিকে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। গ্রামের ঠিক মাঝখান দিয়ে একটি পাকা রাস্তা দক্ষিণে ঢাকা এবং উত্তরে ময়মনসিংহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। 

জনসংখ্যা : আমাদের গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় চার হাজার। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই কৃষিজীবী। গ্রামের শিক্ষিত লোকদের মধ্যে শিক্ষক, অধ্যাপক, ডাক্তার ও চাকরিজীবীর সংখ্যা অন্যান্য গ্রামের তুলনায় অনেক বেশি। শিক্ষিত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কম নয়। এছাড়া গ্রামে রয়েছে কামার, কুমোর, তাঁতি, জেলে, মাঝি প্রভৃতি সম্প্রদায়ের লোক। অধিকাংশ মানুষই সহজ-সরল ও ধর্মভীরু। এরা বিপদাপদে একে অপরকে সহায়তা করে। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পরস্পর মিলেমিশে বাস করে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : আমাদের গ্রামে দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ রয়েছে। এ গ্রামের ‘সা'দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ' একটি সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ কলেজ থেকে প্রতিবছর শত শত ছাত্র-ছাত্রী উচ্চ শিক্ষার সনদ লাভ করে। গ্রামে দুটি মসজিদ রয়েছে। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এছাড়া দুটি ব্যাংক, একটি ডাকঘর এবং একটি বৃহৎ বাজার আছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু পাওয়া যায়। সপ্তাহে একদিন হাট বসে। করটিয়ার হাট বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত হাট। কথিত আছে, করটিয়ার হাটে বাঘের চোখও মেলে। এছাড়া এখানে মরহুম ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর স্মৃতিবিজড়িত একটি জমিদার বাড়ি আছে। শৌখিন মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে দল বেঁধে আজো এ জমিদার বাড়ি দেখতে আসে। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : আমাদের গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম। গ্রামের আম, কাঁঠাল, লিচু, নারকেল ও সুপারির বাগানগুলো সত্যিই নয়নাভিরাম। পাখিদের কলতান, সবুজ মাঠ, ধানক্ষেত, বর্ষার পানিতে প্লাবিত জলাশয়, ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ইত্যাদি দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর । 

উপসংহার : আমাদের গ্রাম সত্যিই একটি আদর্শ গ্রাম। গ্রামের মানুষের মধ্যে যথেষ্ট ভ্রাতৃত্ব ও মৈত্রীর ভাব বিদ্যমান। এ গ্রামে জন্মগ্রহণ করে আমার জীবন সত্যিই সার্থক।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url