দুর্নীতি ও তার প্রতিকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা কর
দুর্নীতি ও তার প্রতিকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
প্রতিবেদনের শিরোনাম দুর্নীতি : উন্নয়নের অন্তরায় ও উত্তরণের উপায়
সরেজমিনে তদন্তের স্থান : টিআইবি ও দুদক কার্যালয়
প্রতিবেদন তৈরির সময় : সকাল ১০:০০টা – দুপুর ২:০০টা
তারিখ : ২২-০৩-২০২৩
দুর্নীতি : উন্নয়নের অন্তরায় ও উত্তরণের উপায়
দুর্নীতি নামক সামাজিক ব্যাধিটির হিংস্র থাবায় আজ গোটা সমাজব্যবস্থা বিপন্ন। ব্যাধিটি অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দুর্নীতি আজ অন্যান্য দেশের পাশাপাশি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের উচ্চপর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করেছে । দুর্নীতির কারণে জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে পড়ছি ।
বাংলাদেশ এখন স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছরের পথ অতিক্রম করছে । কিন্তু এই চলার পথ ম্লান করে দিয়েছে দুর্নীতি । অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জার বিষয় এই যে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের জরিপে দেশটি পর পর পাঁচবার (২০০০, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪, ২০০৫) দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুর্নীতিবাজ জাতি হিসেবে আমরা চিহ্নিত হয়েছি, নিন্দিত হয়েছি । দুর্নীতি বাংলাদেশের সবক্ষেত্রে তার কুপ্রভাব বিস্তার করেছে। ব্যাংক ঋণ হজম, সরকারি সম্পত্তি দখল, গরীবের বরাদ্দকৃত টাকা, টিন, খাদ্য আত্মসাৎ, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস চুরি, আয়কর ফাঁকি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, চাকরিতে নিয়োগ ইত্যাদি সবকিছুতে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি । দুর্নীতির কারণে মানুষ আজ দিশেহারা । দেশ বঞ্চিত হচ্ছে তার প্রত্যাশিত উন্নয়ন থেকে ।
১. আমাদের দেশে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা দুর্নীতিকেই উপরে ওঠার সিঁড়ি বলে ধরে নিয়েছে । আবার, ক্ষমতার অপব্যবহার, সুদ, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদির জন্য কোনো শাস্তি বা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই । দুর্নীতি করেও মানুষ সহজেই পার পেয়ে যায় । একারণে দুর্নীতিও তার ডালপালা যথেচ্ছ বিস্তারের সুযোগ লাভ করে ।
২. প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব থাকার কারণেও সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করছে ।
৩. ঘুষ গ্রহণ, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, অপচয়, চুরি, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে সরকারি আমলারা প্রশাসনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে ।
৪. ব্যবসায়ীমহল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি করে । এছাড়া চোরাকারবার, খাদ্যে ভেজাল, নকল পণ্য উৎপাদন, ওজনে কম দেওয়া, সরকারি কর ফাঁকি দেওয়া ইত্যাদি নানা ধরনের আর্থনীতিক দুর্নীতি যেন স্বাভাবিক কর্মের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
৫. আমাদের দেশে নির্দিষ্ট দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও নিজেদের দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট অবহেলা প্রদর্শন করেন। ফলে দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং মানুষ দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে ওঠে।
৬. অধিকাংশ মানুষের জীবনেই আয়-ব্যয়ের অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করা যায় । আর্থিক সীমাবদ্ধতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইত্যাদি কারণে মানুষের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে । রাতারাতি ধনী হওয়ার আশায় মানুষ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে ৷
৭. মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটায় তারা অবলীলায় দুর্নীতির মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে । ফলে দুর্নীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে ।