বাংলা রচনা : একটি গ্রাম্যমেলা

একটি গ্রাম্যমেলা

একটি গ্রাম্যমেলা

(এই রচনাটি পঞ্চম শ্রেণীর উপযোগী করে রচিত।)

[ রচনা সংকেত: ভূমিকা ;  নাম ও অবস্থান;  বর্ণনা;  সার্কাস ও যাত্রা;  বিভিন্ন লোকশিল্পের সমাবেশ চোখবাজি ও পুতুল নাচ;  উপসংহার।]

ভূমিকা : গ্রাম্যমেলা গ্রামীণ মানুষের আনন্দ ও চিত্তবিনোদনের একটি সাড়া জাগানো অনুষ্ঠান। গ্রামবাংলার প্রায় সর্বত্রই এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। 

নাম ও অবস্থান : তেঘরিয়া একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। বরেন্দ্র সমতল ভূমিতে অবস্থিত। এ গ্রামের উন্মুক্ত, অবারিত প্রান্তরের মাঝখানে রয়েছে বিশাল একটি পুরাতন বটগাছ। এই বটগাছের নিচে বসে তেঘরিয়া মেলা। এ মেলার অদূরে জয়পুরহাট, হিলি, পার্বতীপুরগামী রেললাইন ।

বর্ণনা : গ্রীষ্মের তাপে চারপাশ যখন হাঁস-ফাঁস করে, ঠিক তখনই তেঘরিয়া মেলা বসে বটগাছের ছায়ার নিচে। কাঠের আসবাবপত্র, টিনের বাক্স, শীতল পাটি, বিছানা, কাপড়, খেলনা, বাঁশি, ছোটখাটো গয়না ইত্যাদি পণ্যের দোকান বসে এ মেলায়। মেলার একপাশে থাকে সার্কাস, যাত্রার তাঁবু। অসংখ্য মানুষ আসে আশপাশের গ্রাম থেকে । মেলায় বিচিত্র শব্দ-তরঙ্গ অনবরত ওঠে, পড়ে। ওড়ে বরেন্দ্র ধূসর ধূলিকুণ্ডলী। আনন্দমুখর কিশোর বালকের মুখে বাজে বাঁশের বাঁশির সুর। মেলায় মাইক বাজে, ঢোল বাজে, উত্থিত হয় সার্কাসের জোকারের বিচিত্র ধ্বনি। গ্রামের বালক-বালিকারা আনন্দে ঘুরে বেড়ায় মেলার এক দোকান থেকে অন্য দোকানে।

সার্কাস ও যাত্রা : তেঘরিয়া মেলায় দেশের বিখ্যাত সার্কাস ও যাত্রাপার্টি আসে। যাত্রায় বড়রা ভিড় জমায় দোকানে দোকানে আর ছোটরা সার্কাসে। সার্কাসের জোকারের মুখভঙ্গি, রঙ্গলীলা দর্শকদের সর্বক্ষণ হাস্যরসে মত্ত রাখে। দড়ির খেলা, এক চাকার সাইকেল খেলা, গাধা, বানর, বাঘের খেলা বালক-বালিকাদের প্রচুর আনন্দ দেয়।

বিভিন্ন লোকশিল্পের সমাবেশ : তেঘরিয়া মেলায় অনেক পুতুল, মাটির ঘোড়া, হাতি, হরিণ, পাখি, কাগজের ফুল, বাঁশি ইত্যাদির পশরা বসে। ছোটরা উৎফুল্ল চিত্তে এসব জিনিস কেনে। এসব জিনিসের মাঝে লোকশিল্পের সুন্দর প্রকাশ লক্ষ করা যায় ।

চোখবাজি ও পুতুল নাচ : ছোটরা বিস্মিত হয়ে মেলায় চোখবাজি দেখে। চোখবাজিতে তারা দেশ-বিদেশের কত মজার ছবি দেখার সুযোগ পায়। ছবি দেখে, আবার বাজিকরের মুখে গানও শোনে। পুতুল নাচ ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বেশ উপভোগ করে। পুতুল নাচ আমাদের লোকসাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গ। এতে গ্রামবাংলার অনেক গল্প-রস পাওয়া যায় ।

উপসংহার: তেঘরিয়া মেলা একটি বিখ্যাত ও প্রাচীন গ্রাম্যমেলা। বাংলাদেশের আর সব মেলার সাথে এ মেলারও উন্নতি হওয়া উচিত। প্রত্যেক গ্রাম্যমেলারই একটি লোক-সংস্কৃতিগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একে রক্ষা করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url