বাংলা রচনা : খাদ্যে ভেজাল
খাদ্যে ভেজালঅথবা, খাদ্যে ভেজাল ও জনস্বাস্থ্যঅথবা, খাদ্যে ভেজাল ও ভেজালবিরোধী অভিযান
[সংকেত: ভূমিকা; খাদ্যে ভেজাল; ভেজালযুক্ত খাদ্যের ধরন; খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কারণ; ভেজাল খাদ্যের প্রভাব ও পরিণতি; ভেজালবিরোধী অভিযান; ভেজাল প্রতিরোধে করণীয়; উপসংহার।]
ভূমিকা : ভেজাল বিশ্বব্যাপী একটি মারাত্মক সমস্যা। ভেজাল ছাড়া কোনো দেশ নেই। বিশেষ করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে সবচেয়ে বেশি ভেজাল দেখা যায়। বাজারজাত সকল পণ্যের সাথে ভেজাল মিশিয়ে ব্যবসায়ীরা বেশি লাভ করতে চায়। খাদ্যে ভেজাল মানুষের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক। অর্থলোলুপ ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় ভেজাল মিশিয়ে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। আমাদের সুস্থ থাকার জন্য ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
খাদ্যে ভেজাল : খাদ্যে ভেজাল বলতে বোঝায় ভালো খাদ্যে ক্ষতিকারক দ্রব্য মেশানো। অসাধু ব্যবসায়ীরা সামান্য লাভের আশায় ভালো ও উন্নতমানের খাদ্যের সাথে নিম্নমানের খাদ্য, ক্ষতিকর ও কৃত্রিম দ্রব্য মেশায়। এতে খাদ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়। গুণগত মানহীন খাদ্যই ভেজাল খাদ্য। এসব খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ভেজালযুক্ত খাদ্যের ধরন : উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যে নানা রকম কৃত্রিম দ্রব্য মেশায় । খাদ্যের এই ভেজাল বড়োই বিচিত্র, যা সহজে ধরা যায় না। অসাধু ব্যবসায়ীরা হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে খাদ্যে এরূপ ভেজাল ও নিম্নমানের দ্রব্য মিশিয়ে থাকে। এতে খাদ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়। দুষ্টচক্রের ব্যবসায়ীরা অনেকসময় খাদ্যদ্রব্যের সাথে অখাদ্য মিশিয়েও বাজারে বিক্রি করে। যেমন— ওজন বৃদ্ধির জন্য খাদ্যদ্রব্যের সাথে বালি বা কাঁকর মেশায়, খাদ্যশস্য বহির্জাত দ্রব্য খাদ্যের সাথে মেশায়, ভালো খাদ্যদ্রব্যের সাথে নষ্ট খাদ্যদ্রব্য মেশায়, মজুত খাদ্যের সাথে পানি মিশিয়ে ওজন বৃদ্ধি করে। ভালো তেলের সাথে নষ্ট তেল বা তুলাবীজের তেল মেশায়, আবার সরিষা তেলের সাথে পিঁয়াজের রস মিশিয়ে তেলের ঝাঁজ ও ওজন বৃদ্ধি করে, শিয়ালকাঁটার বীজ মিশিয়ে তেল উৎপাদন করে। সয়াবিন তেলের সাথে পাম তেল মেশায় । গুঁড়া দুধে ম্যালামাইন, ময়দা, সুজি মেশায়, মরিচ গুঁড়ার সাথে ইটের গুঁড়া মেশায়। তরল দুধে পানি মেশায়। চায়ের সাথে ব্যবহৃত চা এবং কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে ওজন বৃদ্ধি করা হয় । বাজারজাত ফলের রসের সাথে নিষিদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ, বেশি বেশি রং-পাউডার মেশানো হয়। গুণগত মানহীন ভেজাল পানি বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়। এতসব ভেজাল দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, দূরীকরণ যেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তব্য তারাও ভেজালমুক্ত নয়। বরং তারা কিছু টাকা হাতে পেলে ভেজাল ব্যবসায়ীদের দ্রব্যে ভেজাল মেশাতে সহায়তা করে।
খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কারণ : অর্থলোলুপ ব্যবসায়ীরা অর্থলালসা চরিতার্থ করতে খাদ্যে ভেজাল মেশায় । অর্থের লোভ প্রায় সব মানুষেরই থাকে । অর্থলোভ চরিতার্থ করতে মানুষ অন্যের ক্ষতি করে । অর্থ উপার্জন করতে মানুষ ন্যায়-নীতি ভুলে অন্যায়ভাবে খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে । এসব ভেজালযুক্ত খাদ্য খেয়ে মানুষ মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে । বেশিরভাগ মানুষ নীতি- নৈতিকতার কথা ভুলে গিয়ে অর্থ উপার্জনের জন্য গর্হিত কাজে লিপ্ত হচ্ছে । ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল শ্রেণির মানুষই অর্থের জন্য এমন নীতি-বহির্ভূত কাজ করছে। তাছাড়া সাধারণ মানুষও আসল-নকলের পার্থক্য ধরতে পারে না। কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা সতর্কতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে সূক্ষ্মভাবে খাদ্যে ভেজাল মেশায়, যা দেখে চেনার কোনো উপায় থাকে না। ফলে খাদ্যে ভেজাল একটি বড়ো সমস্যার রূপ ধারণ করেছে।
ভেজাল খাদ্যের প্রভাব ও পরিণতি : ভেজাল মেশানো খাদ্য মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে । এসব খাদ্য খেয়ে অসংখ্য মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে, অনেক মানুষ পঙ্গু হয়ে পড়ছে, অনেকে মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে । মানুষের এমন দুর্দশার পরও অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ভেজাল মেশানো থেকে বিরত থাকছে না । অতি লোভী ব্যবসায়ীরা নিষ্পাপ শিশুদের করুণ মৃত্যু দেখেও কুণ্ঠিত হয় না । খাদ্যে মেশানো বিষাক্ত ক্যামিকেল খেয়ে অসংখ্য মানুষ মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে । তাছাড়া কিডনি, লিভার নষ্ট হয়ে অনেকে মৃত্যুর সাথে লড়ছে । আর ডায়াবেটিস, টাইফয়েড, হৃদরোগ, পেটের পীড়াসহ আরও অসংখ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশব্যাপী অগণিত মানুষ।