ভাব-সম্প্রসারণ : সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ

সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ

সাহিত্য জাতির দর্পণস্বরূপ

ভাব-সম্প্রসারণ : সাহিত্যের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এতে প্রতিফলিত হয় জাতির চিন্তা-চেতনা, স্বপ্ন-আশা- ভালোবাসা ও আনন্দ-বেদনার ছবি। দেশ ও জাতির আনুপূর্বিক পরিচয় ফুটে ওঠে সাহিত্যে।
সাহিত্যের প্রধান অবলম্বন জীবন ও সমাজ। জাতির সাহিত্যিকগণ দেশ ও জাতির জীবন ও সমাজকে নিয়েই সাহিত্য রচনা করেন। তাঁদের রচনায় প্রতিবিম্বিত হয় জীবনের বহু-বিচিত্র রূপ, সমাজের নানাবিধ নিয়ম-রীতি, সংস্কার ও পরিবর্তন প্রক্রিয়া। কবি-সাহিত্যিকগণ সময় বিশেষে কল্পনার সাতরঙা পাখায় চড়ে কল্পরাজ্যে বিচরণ করলেও কখনো মর্ত্যভূমির জীবনের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করতে পারেন না। তাই মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো তাঁদের সাহিত্যে বাস্তবতার আলোকে রূপায়িত হয়। জীবনের চিত্র আঁকতে গিয়ে তাঁরা সমাজের বাস্তবতাকেও তুলে ধরেন। নাটকে, উপন্যাসে, গল্পে-কবিতায় আমরা জীবন ও সমাজকেই প্রত্যক্ষ করি। একটি জাতির সাহিত্যে সে জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য যেমন রূপারিত হয় তেমনি জাতীয় জীবনের সাংস্কৃতিক পরিচয়ও ফুটে ওঠে। সাহিত্যে বিধৃত হয় জাতীয় জীবনের গৌরবগাথা, তাদের সভ্যতা ও অগ্রগতির বাস্তব প্রেক্ষাপট। সাহিত্য অধ্যয়ন করেই আমরা কোনো জাতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা করতে পারি। গ্রিক সাহিত্য পড়ে আমরা যেমন গ্রিকদের সভ্যতা ও জীবনাচার সম্পর্কে জানতে পারি, তেমনি ফারসি সাহিত্য পড়ে জানতে পারি পারস্য সভ্যতার ইতিবৃত্ত। বাংলা সাহিত্যে আমাদের বাঙালি জীবনের আদ্যন্ত পরিচয় ফুটে উঠেছে। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি, জীবন-জীবিকা, সংগ্রাম-আন্দোলনের চিত্র রূপায়িত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের মধ্যে। তাই বলা যায়, কোনো জাতিকে জানতে হলে সে জাতির সাহিত্যের সাথে পরিচিত হওয়া আবশ্যক।
সাহিত্য হলো আয়নার মতো স্বচ্ছ। আয়নায় যেমন অবিকল চেহারা দেখা যায় তেমনি একটি জাতির সার্বিক অবস্থা প্ৰতিবিম্বিত হয় সে জাতির সাহিত্যে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url