ভাব-সম্প্রসারণ : কাঁটাবনের গোলাপই সত্যিকারের গোলাপ

কাঁটাবনের গোলাপই সত্যিকারের গোলাপ

কাঁটাবনের গোলাপই সত্যিকারের গোলাপ

ভাব-সম্প্রসারণ : জীবন সংগ্রামময়। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে, দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জীবনে পূর্ণতা আসে। তদ্রূপ যে গোলাপ সহজে হাতে এসে ধরা দেয়; তার চেয়ে কাঁটার আঘাত সয়ে গোলাপ অর্জন করার মধ্যেই এর প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এ বিশ্বসংসারে নানা প্রতিকূলতা সয়েই মানুষকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। নিরবচ্ছিন্ন সুখ মানবজীবনে পাওয়া যায় না। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনাকে গ্রহণ করেই জীবন পথে এগিয়ে যেতে হয়। জীবনের প্রতি পদেই আছে আপদ- বিপদ, বিপ্লব-বিদ্রোহ, ব্যর্থতার গ্লানি; আছে ভয়ের চোখ-রাঙানি; কিন্তু তারপরেও জীবনতরী বেয়ে যেতে হয়। কাপুরুষের মতো জীবন সংগ্রামে ভীত হয়ে বসে থাকার জন্য জীবন নয়, বরং নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমেই এ পৃথিবীতে গড়তে হয় সাফল্যের ভিত্তি। ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক সর্বক্ষেত্রেই পরিশ্রমই উন্নতির মূল চাবিকাঠি । একান্ত সাধনা আর নিরন্তর পরিশ্রমে যা অর্জিত তা দেহ-মনে অপার আনন্দ সঞ্চার করে। আর এখানেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠা, খ্যাতি, প্রতিপত্তি, যশ-সুনাম, মর্যাদা এসবের জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম আর কঠোর সাধনা। পক্ষান্তরে, জীবনের কঠিন কঠোর গদ্যে যারা দিশাহারা, বাস্তবতার চরম কশাঘাতকে দূর থেকেই ভয় করে; এর মুখোমুখি না দাঁড়িয়ে বরং পালানোর পথ খুঁজতেই যারা বেশি ব্যস্ত— তারাই কাপুরুষ, ব্যর্থ আর এই বৃহৎ জগতে এদের বাঁচার মতো কোনো যোগ্যতা থাকে না। অথচ ‘মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব'  চিরসত্যটিও এ ধরনের মানুষের কাছে কলঙ্কের কালিমা ছড়ায়। বস্তুত এরা জীবনের প্রকৃত স্বাদ উপভোগ করতে বরাবরই ব্যর্থ। বরং সীমাহীন হীনম্মন্যতায় এদের জীবন অতিবাহিত হয়। ব্যক্তিজীবনে চরম অসুখী এবং সামাজিকক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবদান না থাকায় মূল্যহীন। সুতরাং নিরলস পরিশ্রম আর সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জীবনকে পূর্ণতা দিতে হবে। বহুবিধ ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও যারা জীবনকে পরিচালিত করে তাদের কাছে সুখ নামের সোনার পাখিটি একদিন ধরা দেবেই; আর এরাই জীবনকে তৃপ্তি ভরে উপভোগ করে। পৃথিবীতে এ ধরনের দৃষ্টান্ত খুব কম নেই। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে আব্রাহাম লিংকন হয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট; গরিবের সন্তান এপিজে আবদুল কালাম হয়েছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট। আমাদের বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম দরিদ্রতার কশাঘাতকে সহ্য করেই হয়েছেন চিরস্মরণীয়। কাজেই বাধা-বিঘ্নের বন্ধুর পথ না পাড়ি দিয়ে কোনো মানুষই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা খুঁজে পায় না।

মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঝুঁকি আছে। আর গোলাপের সৌরভ উপভোগের জন্য যেমন কাঁটার আঘাত উপেক্ষা করতে হয় তেমনি দৃঢ়চিত্ত সাহসীরা জীবনের ঝুঁকি নিতে কখনোই পিছ-পা হয় না। তাই জীবন সংগ্রামে তারা জয়ী। আর তারাই জীবনে খুঁজে পায় অনাবিল আনন্দ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url