ভাব-সম্প্রসারণ : পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না

পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না

পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না।

ভাব-সম্প্রসারণ : পরােপকারেই মানবজীবনের সার্থকতা। মানুষের জন্ম হয়েছে অন্যের কল্যাণ সাধনের জন্য। শুধু নিজেকে নিয়ে নিমগ্ন থাকা মনুষ্যত্বের অবমাননার নামান্তর। ফুল যেমন নিজের সৌন্দর্য, সুবাস অন্যকে বিলিয়ে দিয়ে তার জীবন। পরিপূর্ণ করে তেমনি অপরের মঙ্গল সাধনায় মানবজীবন ধন্য হতে পারে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। এই শ্রেষ্ঠত্বের পিছনে বড়াে যে গুণটি রয়েছে তাই হলাে অপরের মঙ্গল-সাধন করা। নিজের স্বার্থ বড়াে করে দেখার মধ্যে মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয় না বরং সংকুচিত হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকের বিশ্বে মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, অপরের মঙ্গল-সাধন করা তাে দূরে থাক; এ চিন্তাও করতে ব্যর্থ। দুনিয়াব্যাপী স্বার্থপর সম্প্রদায়। নিজেদের সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েস নিয়ে যতটা তৎপর, সেখানে মানুষের কল্যাণের বিষয় মােটেই গুরুত্ব বহন করে না। বরং সর্বগ্রাসী ভােগবাদীরা সমস্ত নিয়ম-নীতিকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের স্বার্থের প্রাসাদ তৈরি করে। ফলে পৃথিবীতে শােষিত-বঞ্চিত, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু মানুষের স্বভাব তাে এ রকম হওয়ার কথা নয়। বরং ফুলের পবিত্রতায় তার মনকে রাঙাবে, মানুষকে ভালােবেসে তার মানবজীবন সার্থক করে গড়ে তুলবে। মানবজীবন ফুলের মতােই তা নিবেদিত হওয়া উচিত পরের জন্য, সমাজের হিত সাধনে। পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মধ্যেই থাকে জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। তাই পরােপকার সাধনই মানবজীবনের মহত্তম কাজ। আমরা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে বিষয়টি যথার্থভাবে উপলব্ধি করতে পারি । মৌমাছি অনেক কষ্ট করে যে মৌচাক রচনা করে, তা কি শুধু তাদেরই জন্য? তা নয় বরং, মৌচাকের মধু মানুষ পান করে পরম তৃপ্তি লাভ করে। সুতরাং মানুষের জীবনে পরােপকারের চেয়ে বড়াে আর কিছু নেই। তাইতাে, জ্ঞানী-গুণীরা পরােপকারের উদ্দেশ্যে জীবন বিসর্জন দিতে মােটেই ভীত হননি। খুদিরাম, প্রীতিলতা, সূর্যসেনসহ অনেকের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে আজও উচ্চারিত হয়। এ প্রসঙ্গে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদের আত্মদানও চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। কিন্তু আজ বিশ্বায়নের এ সময়ে পরােপকারের বিষয়টি প্রাধান্য না পেয়ে বরং বৈশ্বিক চিন্তা-চেতনায় মানুষ বেশি নিমগ্ন হচ্ছে। তথ্য-প্রযুক্তি মানুষকে অনেকটা যান্ত্রিক করে তুলেছে; মানুষ উদয়-অস্ত নিরলস পরিশ্রম করে প্রচুর অর্থ-সম্পদ অর্জন করেছে; তবে, সেখানে মানবকল্যাণের লেশমাত্র ঠাই নেই। মানুষের সুকোমলবৃত্তি চর্চার জায়গাটি অর্থ-বিত্তের দখলে। তাই অত্যন্ত শৈশব থেকেই। শিশুদের পরােপকারের শিক্ষা দিতে হবে। পাঠ্যসূচিতে বিভিন্ন মহৎ ব্যক্তির ঘটনাবহুল জীবনী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পরােপকারের শিক্ষাই মানুষকে পরিশীলিত জীবন দিতে পারে। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে পরােপকারের মধ্যেই জীবনের সার্থকতা নিহিত থাকে। তাই মানুষের কল্যাণ সাধনই হােক সকলের ব্রত।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url