অভিজ্ঞতা বর্ণনা : পতাকা উত্তোলন
পতাকা উত্তোলন
জাতীয় পতাকা হলাে কোনাে স্বাধীন দেশের বিজয় নিশান; জাতির মর্যাদা ও সার্বভৌমতার প্রতীক। বিশ্বের স্বাধীন জাতিসমূহের মতাে আমাদেরও জাতীয় পতাকা আছে। ১৯৭১ সালে সুদীর্ঘ নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের স্বতন্ত্র বিজয় নিশান বা জাতীয় পতাকা অর্জন করি। আমাদের দেশের জাতীয় পতাকায় আয়তাকার সবুজ রঙের মাঝখানে লাল বৃত্ত চিহ্নিত। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় । পতাকা উত্তোলন বলতে বােঝায় সুউচ্চ লম্বিত দণ্ডে পতাকাকে সসম্মানে ধারে ধারে উর্ধপানে উড্ডয়ন করা । তবে স্বাভাবিক পতাকা উত্তোলন আর আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলনের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য। রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আমার জীবনের প্রথম পতাকা উত্তোলনের অভিজ্ঞতা এখানে বর্ণনা করছি। উত্তর বড়াে মগরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আমি বৃত্তিসহ পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। সে প্রায় সাত বছর আগে। এরপর ধারাবাহিক কৃতিত্ব বজায় রেখে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করে আজ আমি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার দোরগােড়ায়। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত বিজয় দিবসাট আমার জীবনে বেশ স্মরণীয় ও গৌরবজনক হয়ে থাকবে এ কারণেই যে, ওই দিন আমি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিরল সম্মান লাভ করেছিলাম। অবসর পেলেই আমি আমার ছেলেবেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে ঘুরে দেখে আসি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সাথে কুশল বিনিময় করি। একজন কৃতী ছাত্র হিসেবে শিক্ষকগণ আমাকে আন্তরিকভাবে স্নেহ করেন। ২০২২ সালের ১৬ই ডিসেম্বরেও প্রতি বছরের মতাে আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়। বিজয় অনুষ্ঠানে শামিল হতে আমিও গিয়ে আমার পুরানাে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হাজির হই। বিশেষ কাজে বাড়ি আসায় এবার আমার কলেজের বিজয় উদ্যাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। যাহােক, আমাকে পেয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমলকৃষ্ণ স্যার বেজায় খুশি হলেন। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, কৃতী ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি আবৃত্তি, গান এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনেও আমার বেশ দখল আছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পতাকা উত্তোলন পর্ব । ছেলেমেয়েরা সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াল। আমরা সাবেক ছাত্ররাসহ আগত অতিথিবৃন্দ বিজয়ের গর্বস্ফীত বক্ষে এক পাশে দাঁড়ানাে ছিলাম। শিক্ষকগণ পতাকা উত্তোলনের দণ্ডটির পাদদেশে দুটি সারিতে দাঁড়ানাে ছিলেন। প্রধান শিক্ষক সবার সামনে। তিনি হঠাৎ ঘােষণা করলেন, এবারের পতাকা উত্তোলন আমি করব না। পতাকা উত্তোলন করবে আমাদের বিদ্যালয়ের সাবেক কৃতী ছাত্র সুকান্ত । আমার তখন গর্বে আনন্দে চোখে জল এসে গেল। দেশপ্রেমের এক প্রবল আবেগে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । আমি শ্রদ্ধাবনত মস্তকে মৃদু পায়ে পতাকা দণ্ডটির পাদদেশে গিয়ে দাঁড়ালাম। অতঃপর কম্পিত হাতে ধীরে ধীরে দড়ি ধরে টেনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলাম। পতপত করে উড়তে লাগল আমাদের জাতির মর্যাদা ও স্বকীয়তার প্রতীক। সবাই পতাকাকে সালাম জানালাম এবং সববেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাইলাম। এরপর পঞ্চম শ্রেণির কৃতি ছাত্র প্রাঞ্জল সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করাল এবং শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক স্যার বিজয় দিবসের ওপর একটি সারগর্ভ বক্তব্য প্রদান করলেন। এভাবে ক্রমান্বয়ে বিজয় দিবসের নির্ধারিত অনুষ্ঠান পালিত হলাে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে আমার স্মৃতিতে রয়ে গেল গৌরবােজ্জ্বল এক অনন্যসাধারণ অভিজ্ঞতা।