ভাব-সম্প্রসারণ : পড়িলে বই আলােকিত হই/না পড়িলে বই অন্ধকারে রই

পড়িলে বই আলােকিত হই/না পড়িলে বই অন্ধকারে রই।

পড়িলে বই আলােকিত হই/না পড়িলে বই অন্ধকারে রই। 

ভাব-সম্প্রসারণ : শিক্ষাই আলাে, নিরক্ষরতা অন্ধকার। শিক্ষার মূল উপকরণ এবং উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো বই। ' বই হলাে জ্ঞানের প্রদীপ, বইয়ের পাতায় আলাে জ্বলে '। বই পড়ার মধ্য দিয়েই মানুষ জ্ঞানালােকিত হয়। জ্ঞানের চরম ফল হলাে তা চোখে আলাে দেয়। যে আলােতে সে জগতের সকল সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করতে পারে। সুন্দর-অসন্দ প্রভেদ করতে পারে, আলাে ও অন্ধকারের মাঝে পার্থক্য তৈরি করে আলােকিত পথটিকে বেছে নিতে পারে। জ্ঞান বইয়ের মাধ্যমে অর্জন করা যায় বলে আলােকিত মানুষ হওয়ার জন্য আমাদের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস তুলতে হয়। 

মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার অনুভূতি নিজের বুকে নিয়ে অনাগত পাঠকের জন্য চির অপেক্ষমান হয়ে আছে বই। প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের জ্ঞানভান্ডার আজ মহাসমুদ্র হয়ে স্বল্পায়ু মানুষের জ্ঞান-পিপাসা মেটানাের অপেক্ষায় আছে বইয়ে রূপ ধারণ করে। জ্ঞানের মহাসমুদ্রের কল্লোল শােনা যায় বইয়ের পাতায়। তাই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন। ‘বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি’—বই পড়ার মাধ্যমেই আমরা মানব-চরিত্রের বৈচিত্র্য উপলব্ধি করতে পারি। বীরতের মহিমা, ত্যাগের উপমা, সত্যের জীবনদর্শন, ধর্মের শাহাদত, স্বার্থসিদ্ধির হীনম্মন্যতা, বিভিন্ন দেশের সামাজিক আচারআচরণ, ঐতিহাসিক কাহিনি, ভৌগােলিক বৃত্তান্ত, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার ইত্যাদি আমরা পড়ার অভ্যাস বা বই পড়ার মধ্য দিয়ে জানতে পারি। সৃজনশীল পাঠের মাধ্যমেই একজন মানুষ আলাের পথের সন্ধান পেতে পারে। নিজেকে গড়ে তুলতে পারে একজন আলােকিত মানুষ হিসেবে। প্রকৃতপ্রস্তাবে শিক্ষা ছাড়া পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার কোনাে উপায় নেই। নিরক্ষর ব্যক্তি অজ্ঞ-অন্ধকারময় পথে পথ হাতড়িয়ে অন্ধের মতাে অনুমান করে পথ চলে। সে তার নিরক্ষরতার জন্যে পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ, ন্যায়-অন্যায়, লাভ-লােকসান, আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ সবকিছু থেকে হয় বঞ্চিত, হয় প্রতারিত। 

এজন্যে, পণ্ডিত ও প্রাজ্ঞজনেরা বলেছেন- 'কোনাে সভ্য জাতিকে অসভ্য করার ইচ্ছা। যদি তােমার থাকে তাহলে তাদের সব বই ধ্বংস কর। আবার কোনাে দেশ বা জাতিকে উন্নত করার চেষ্টা করলে, সুলিখিত বই বা সাহিত্যের সাহায্যে তা করতে হবে। জাতির ভেতর বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তােলাে, বইপ্রিয় পাঠক তৈরি করা, সাহিত্যের ধারা সৃষ্টি করাে, আর কিছুর আবশ্যকতা নেই। পৃথিবীতে শিক্ষা বা জ্ঞানই একমাত্র সম্পদ যা জীবনের মতাে মহামূল্যবান। জীবন ছাড়া দেহের যেমন মূল্য নেই, শিক্ষা ছাড়া তেমনি জীবনেরও কোনাে মূল্য নেই। 

যে ব্যক্তি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তার মনুষ্যজীবন ব্যর্থ। তাকে চরম দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাতে হয়। জ্ঞানবিজ্ঞানের আলােয় আলােকিত নয় বলে পদে পদে সে অন্ধকার দেখে। চোখ থাকতেও সে অন্ধের মতাে বিশ্বের সঙ্গে। সম্পর্কহীন জীবনযাপন করে। দারিদ্র্যই তাদের জীবনের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। দারিদ্র্য ও দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পথ সে জানে না। শুধু ব্যক্তি জীবনেই নয়, জাতীয় জীবনেও নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্য নিয়ে আসে। নিরক্ষর জাতি আধুনিক উন্নত জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে। বস্তুত ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য শিক্ষার আলাে ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনাে উপায় নেই। অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমিজ্জত নিরক্ষর জনগােষ্ঠী তাই জাতির জন্যে বােঝাস্বরূপ। এজন্য বর্তমান বিশ্বে শিক্ষাকে উন্নয়নের পূর্বশর্ত বিবেচনা করা হলে থাকে। আর তা সম্ভবপর একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমে। 

সৃষ্টিকর্তা মানুষকে জ্ঞান অন্বেষণ ও আহরণ করতে বলেছেন। আর তা শুধু পুস্তক পাঠের মাধ্যমেই সম্ভব। বই পড়ার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ মনীষীদের উদ্ভাবিত জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হয়ে নিজেকে আলােকিত করা যায়। জীবনের অন্ধকার ঘরটিকে আলােকিত করতে হলে বই পড়ার কোনাে বিকল্প নেই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url