অনুচ্ছেদ রচনা : আমাদের গ্রাম
আমাদের গ্রাম
মাতৃভূমি মানুষের কাছে স্বৰ্গবিশেষ। আমার গ্রাম আমার কাছে স্বর্গ। আমার জন্ম গ্রামে। আমার গ্রামের চেয়ে পবিত্র আর কিছু নেই। যেখানে আমার জন্ম, সেই গ্রামের জল আমার তৃষ্ণা মিটিয়েছে, খেতের ফসল ক্ষুধা দূর করেছে, পাখির কলকাকলি আমার ঘুম ভাঙিয়েছে, মুক্ত বাতাস আমার প্রাণ সজীব রেখেছে। ছায়ায় ঘেরা মায়ায় জড়ানাে আমার গ্রাম। কবির ভাষায় ;
আমার গ্রামের নাম রূপনগর। গ্রামের দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছােট খাল। পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী; যদিও নদীটি গাঁয়ের মানুষের কাছে বড় খাল নামে পরিচিত। গােপালগঞ্জ জেলায় ছায়াময় মায়াময় এ-গ্রাম। নদীর পূর্ব পাড়ে বরিশাল জেলা শুরু। পূর্ব-পশ্চিমে দু-মাইল লম্বা ও উত্তর-দক্ষিণে দেড় মাইল প্রশস্ত।
আমাদের গ্রামে প্রায় তিন হাজার লােক বাস করে। এ-গ্রামে সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। সবার মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন অটুট।
আমাদের গ্রামের মানুষ ভালাে কাপড়চোপড় পরে। পুরুষেরা লুঙ্গি, পাজামা, পাঞ্জাবি, শার্ট এবং মেয়েরা সালােয়ার, কামিজ, শাড়ি পরে।
আমাদের গ্রামের প্রায় প্রতি বাড়িতে উচ্চশিক্ষিত লােক রয়েছেন। তাঁরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চপদে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশের বাইরেও অনেকে কর্মরত। যারা গ্রামে বসবাস করেন, তাদের কেউ কৃষক, কেউ-বা ব্যবসায়ী। এ ছাড়া নানান পেশার লােক রয়েছেন আমাদের গ্রামে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, উকিল, তাঁতি, জেলে, কামার, কুমার, সুতাের।
আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি টিনের তৈরি। বারােটি দালান রয়েছে। কোনাে কোনাে বাড়ি ছনের বা খড়ের তৈরি।
গ্রামের প্রধান ফসল ধান। আমাদের গ্রামে প্রচুর ধান হয়। এ ছাড়াও উৎপন্ন হয় পাট, গম, ডাল, সরিষা, তিল, আখ এবং নানারকম শাকসবজি। প্রচুর পরিমাণে গাভীর দুধ পাওয়া যায়। পুকুর, খাল ও নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। সব বাড়িতেই হাঁস-মুরগি পালন করে। বাগানে আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেয়ারা, নারকেল, জাম, সুপারি, তাল, বেল, হরীতকী, আমলকী ইত্যাদি পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষের নিজেদের খাবারের জন্য যা প্রয়ােজন তার প্রায় সবই গ্রামে উৎপন্ন হয়।
আমাদের গ্রামে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীবনের প্রথম পাঠ শুরু করে। প্রাথমিক পাঠ শেষ করে ভর্তি হয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। আমাদের গ্রামে একটি স্বেচ্ছাসেবক নৈশ বিদ্যালয় আছে। যারা লেখাপড়া জানেন না, গ্রামের শিক্ষিত যুবকেরা তাঁদের সন্ধ্যার পর লেখাপড়া শেখান। আমাদের গ্রামে কোনাে নিরক্ষর লােক নেই।
আমাদের গ্রামে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানও। যেমন- পােস্ট অফিস, দাতব্য চিকিৎসালয়, কৃষি অফিস।
আমাদের গ্রামে একটি বড় হাট আছে। সপ্তায় দুইদিন হাট বসে। হাটবার হলাে : শনিবার ও বুধবার। হাটের দিন অনেক দূর থেকে বহু ক্রেতা-বিক্রেতা আসে। হাটে ধান, চাল, আলু, বেগুন, পটল, পাট, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি প্রায় সবধরনের জিনিসপত্র বেচাকেনা হয়। গ্রামে প্রতিদিন সকালে বাজার বসে। মাছ, দুধ, শাকসবজিসহ দৈনন্দিন প্রয়ােজনীয় প্রায় সব জিনিস এখানে পাওয়া যায়।
গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে নদী বয়ে চলেছে। গ্রামের তিন পাশে রাস্তা রয়েছে। দক্ষিণের রাস্তায় গাড়ি চলে। এগাড়ি কোটালীপাড়া হয়ে চলে যায় গােপালগঞ্জ। উঁচু বাঁধের উপর দিয়ে রিকশা, ভ্যান চলে। যখন গ্রামে পানি ওঠে, তখন রাস্তা থাকার কারণে লােকজনের চলাচলে কোনাে সমস্যা হয় না। সব রাস্তায় রিকশা-ভ্যান চললেও গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে চলাচল করে।
প্রকৃতি যেন তার খেয়ালে আমাদের গ্রামটি সাজিয়েছে। যেদিকেই তাকানাে হােক না কেন, সেদিকেই সবুজ আর সবুজ। আম, জাম, কাঁঠাল, জামরুল, বাতাবি, বেল, কুল, পেয়ারা, কদম, শিরিশ কড়ই, চাম্বল, মেহগনি, শিশুকাঠসহ নানারকমের গাছ গ্রামকে ছায়াময় করে তুলেছে। মাঠভরা শস্যখেতের উপর দিয়ে যখন বাতাস বয়, তখন মনে হয় যেন সবুজ সমুদ্রে ঢেউ উঠেছে।
অর্থনৈতিক দিক থেকে আমাদের গ্রাম সচ্ছল । গ্রামের সবাই স্বনির্ভর বলে চুরি-ডাকাতি খুন-খারাবির কোনাে বালাই নেই। গ্রামের শতভাগ লােকের অক্ষরজ্ঞান থাকায় কোনাে রকমের কুসংস্কার নেই।
সুজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা আমাদের গ্রাম। এমন গ্রামে জন্ম নিয়ে ধন্য আমি। আমাদের গ্রামের সকল প্রকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আমি এগিয়ে যাব। কুপ্রভাব থেকে গ্রামকে মুক্ত রাখ; আমরা সবাই মিলে গ্রামের ঐতিহ্য বজায় রাখব- এ আমাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।