গ্রামকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র
❋গ্রামকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র।
সুপ্রিয় সাজিদ,
আমার শুভেচ্ছা নাও। আশা করি সবাইকে নিয়ে ভালাে আছ। তােমার সাথে অনেকদিন কোনাে যােগাযােগ করতে পারিনি। এর কারণ নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে আমাদের গ্রামকে মুক্ত করার কাজে ব্যস্ত ছিলাম এতদিন। এ ব্যস্ততার কারণে তােমার কাছে চিঠি লিখতে দেরি হলাে।
তুমি তাে নিরক্ষরতার ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন, কারণ তুমি তাে শহরে থাক। কিন্তু গ্রামের নিরক্ষর মানুষ যে কী অভিশপ্ত জীবনযাপন করে, তা চোখে না দেখলে বােঝা যায় না। নিরক্ষরতার কারণে তারা প্রতিনিয়ত ঠকছে, বঞ্চিত হচ্ছে, ধোঁকা খাচ্ছে, রােগ-শােকে ধুকে মরছে। এসব চিত্র কোনাে ক্রমেই সহ্য করতে পারছিলাম না।
তাই সমমনা কয়েকজন মিলে প্রত্যয়' নামে একটা সংগঠন গড়ে তুলি। এর প্রথম কাজ হলাে, যে-কোনাে মূল্যে আমাদের গ্রামকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা। তাই আমরা প্রথমে গ্রামের মুরব্বিদের সাথে কথা বলি। তারা আমাদের কথা শুনে খুব খুশি হলেন এবং নানা পরামর্শ ও সহযােগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমার উদ্যোগের কথা জেনে, তার কাছারিঘরটা নৈশ-বিদ্যালয়ের জন্য ছেড়ে দিলেন। আমরা কয়েকজন শিক্ষকের ভূমিকা পালন করি। পুরাে গ্রামে উৎসাহের ধুম পড়ে গেল। নিরক্ষর ছেলে, বুড়াে, বৌ-ঝিরা। এ নৈশবিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। আমরা প্রত্যেকে কাজ ভাগ করে নিলাম। এভাবে আজ ছয়মাস কাজ করছি। আশা করছি আর ছয়মাস কাজ করলে গ্রামের সব বয়স্কদের নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা যাবে।
ইতােমধ্যে উপজেলা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আমাদের নৈশবিদ্যালয় পরিদর্শন করে গেছেন। কিছু সাহায্যেরও আশ্বাস দিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে প্রথম আলাে পত্রিকায় একটা সচিত্র প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে।
আমি বুঝলাম, আসলে উদ্যোগ নিলেই হয়। উদ্যোগ নিয়েছি বলেই আজ গ্রামের বয়স্করা নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে চলছে। তুমি সময় পেলে একবার আমাদের নৈশবিদ্যালয়টি এসে দেখে যেও। আজ আর নয়। চিঠির উত্তর দিও।