বাংলা রচনা : জাতীয় ফুল শাপলা
সূচনা : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টিতে ফুলের অবদান রয়েছে। অন্যান্য ফুলের মতাে শাপলা সে-সৌন্দর্যের অংশীদার। শাপলা বাংলাদেশের সব অঞ্চলে সহজে পাওয়া যায়। শাপলা ফুলের সৌন্দর্য বাংলাদেশের সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিবেচনায় ও খুব সহজেই পাওয়া যায় বলে শাপলা জাতীয় ফুলের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার মতাে অন্যান্য দেশেও জাতীয় ফুল রয়েছে। যেমন- ভারতের জাতীয় ফুল পদ্ম, ইরানের জাতীয় ফুল গােলাপ ইত্যাদি।
প্রতিস্থান : শাপলা জলে জন্মে বলেই এটি জলজ ফুল। খালে-বিলে, হাওড়ে-বাঁওড়ে, ঝিলে, পুকুরে, নদীতে, পরিত্যক্ত জলাশয়ে এ-ফুল জন্মে। এ-ফুল চাষাবাদ করতে হয় না। বিনা যত্নেই ফুটে থাকে। জাতীয় জীবনে ব্যবহার জাতীয় জীবনে এর অনেক ব্যবহারিক দিক রয়েছে। ডাকটিকিট ও মুদ্রায় শাপলার ছাপচিত্রের ব্যবহার আছে। জাতীয় প্রতীকের মর্যাদা পেয়েছে এ ফুল।
প্রকারভেদ : রঙের বিবেচনায় শাপলার রয়েছে রকমফের। শাপলা সাদা, লাল, নীল, হলুদ, কালচে লাল, বেগুনি-লাল, রক্ত-বেগুনি, নীল-বেগুনি প্রভৃতি রঙের হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সাদা, লাল ও নীল- এই তিন রঙের শাপলা পাওয়া যায়। অন্যান্য রঙের শাপলার তুলনায় সাদা শাপলা বেশি পাওয়া যায়। আমাদের জাতীয় ফুল সাদা শাপলা।
পরিচয় : পানির নিচের মাটি থেকে প্রথমে মূল বা শিকড় গজায়। আর সে-শিকড় থেকে সরু নলের মতাে একটি দণ্ড পানি ভেদ করে উপরে উঠে আসে এবং পানির উপরে সে-দণ্ডটি থেকে পাতা বের হয়। পাতা বড় ও পুরু হয়ে পানির উপরে ভাসে। আর মূল থেকে একাধিক শাখা বের হয় যা দেখতে অনেকটা ঝাড়ের মতাে। একাধিক শাখাই মূলত শাপলার নল বা ডাটা। এসব নলের মাথায় কলার মুচির আকৃতির ফুলের কুঁড়ি ফোটে। ফুলগুলােও পাতার মতাে পানির উপরে ভাসে। শাপলা ফোটে বর্ষাকালে।
শাপলা ফুলের মেলায় প্রকৃতিকে অপরূপ সাজে সজ্জিত হতে দেখা যায়। শাপলা পরিপূর্ণভাবে ফোটার সাথে সাথে পাপড়িগুলাে ঝরে পড়ে; আর নলের আগায় গােলাকার বিচিটি পানিতে ডুবে যায়। পানি বাড়ার সাথে সাথে শাপলার বৃদ্ধি ঘটে। আর পানি কমার সাথে সাথে নিশ্চিহ্ন হতে থাকে। শীত মৌসুমে খালে-বিলে, নদী-নালায় পানি না থাকার কারণে শাপলা মরে যায়। তবে বিচিগুলাে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। নতুন বর্ষার আগমনে শাপলাগুলাের শিকড় থেকে আবার চারা গজায়।
সৌন্দর্য : বর্ষার জলে শাপলা ফোটার সাথে সাথে প্রকৃতি ধরা দেয় নবরূপে। শাপলার সৌন্দর্য এমনভাবে ফুটে ওঠে যে প্রকৃতিকে অপরূপ বলে মনে হয়। জ্যোৎস্নারাতে নানা রঙের শাপলা রাতের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তােলে।
উপকারিতা : শাপলা সৌন্দর্য বাড়ায়। শিশু-কিশােররা শাপলা ফুল হাতে নিয়ে আনন্দ উপভােগ করে। তারা শাপলার নল দিয়ে মালা গাঁথে এর নল বা উঁটা তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শাপলার বিচি থেকে খৈ হয়। তা ছাড়া শাপলা থেকে যে শালুক হয় তা শুকিয়ে খাওয়া যায়।
অপকারিতা : শাপলা অনেক সময় ধানখেতের ক্ষতি করে থাকে। ধানের চারার সঙ্গে শাপলার চারা বাড়লে ধানগাছ বাড়তে পারে না।
উপসংহার : বাংলাদেশের অধিকাংশই জলজ অঞ্চল। বর্ষাকালে তার সম্পূর্ণ রূপ আমরা দেখতে পাই। আর বর্ষাকালে শাপলা জলজ ফুল হিসেবে প্রকৃতির শােভাবর্ধন করে। এর স্বাভাবিক সৌন্দর্য বাঙালির লােকজীবনে, জাতীয় জীবনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। শাপলা ফুলের তুলনা হয় না।
শাপলা ফুলের পরাগায়ন কিসের মাধ্যমে ঘটে??
পতঙ্গ
শাপলা ফুল কখন ফোটে