ভাব-সম্প্রসারণ: জন্ম হােক যথা তথা, কর্ম হােক ভালাে

জন্ম হােক যথা তথা, কর্ম হােক ভালাে

জন্ম হােক যথা তথা, কর্ম হােক ভালাে।
অথবা, 
নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশ পরিচয় সেই আশরাফ জীবন যাহার পুণ্য কর্মময়। 

ভাব-সম্প্রসারণ : জন্ম মানুষের প্রকৃত পরিচয় বহন করে না; বরং কর্মই মুখ্য। উঁচু ঘরে কিংবা সম্রান্ত বংশে জন্ম নিয়েও মানুষ হীন কাজ করতে পারে; অন্যদিকে অতিশয় দরিদ্র পরিবারের সন্তানও তার কর্মে পৃথিবীতে বৃহৎ অবদান রাখতে পারে। সুতরাং কর্মই মানুষের পরিচয়ের একমাত্র মাপকাঠি। পৃথিবীতে একসময় নানা বৈষম্যে বংশগৌরবকে খুবই মর্যাদার বলে চিহ্নিত করা হতাে। কে কোন বংশে জন্মেছে- এ নিয়েও সম্মানের পার্থক্য করা হতাে। বরং নিচু তথা দরিদ্র বংশে যারা জন্মেছে তাদের অপমান-অপদস্তের সীমা ছিল না। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বংশ পরিচয় প্রায় অচল। বংশ পরিচয় কিংবা বংশ মর্যাদা এখনাে মানুষকে প্রকৃত মর্যাদা দিতে সক্ষম নয়; বরং কর্মময় জীবনের কাছে জন্মগৌরব বা বংশ মর্যাদার কোনাে মূল্যই নেই। কেননা জন্ম বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে স্রষ্টার ওপর; তাই মানুষের করার কিছু নেই। অন্যদিকে, কর্ম মানুষের নিয়ন্ত্রণে। কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে বিকশিত করার যথেষ্ট সুযােগ পায়। আর কর্মেই প্রকাশিত হয় মানুষের মনুষ্যত্ব। সুতরাং মানুষের প্রকৃত পরিচয়ে জন্ম গৌণ, কর্মই সেখানে মুখ্য। তাই বলা যায় কর্মই জীবন'। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার কারণে মানুষের মধ্যে নানা শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষে মানুষে প্রভেদ থেকে গেলেও কোথাও কর্মকে অবমূল্যায়ন করা হয় না। সুতরাং একনিষ্ঠ শ্রম আর একান্ত কর্ম-সাধনা সর্বত্রই সমাদৃত হয়। আর তাই জন্মের পরিচয় আজ হাস্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষের দৃষ্টান্ত রয়েছে, যাদের জীবনে জন্ম বড়াে নয়, কর্মই তাদের অবিস্মরণীয় করেছে। জর্জ ওয়াশিংটন সামান্য একজন কৃষকের সন্তান হয়েও আপন যােগ্যতা ও কর্ম-সাধনায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে আরও উল্লেখযােগ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রেসিডেন্ট, প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের জন্ম হয়েছিল একজন পাটনির গৃহে। দরিদ্র পরিবারে জন্মেও কাজী নজরুল ইসলাম হয়েছেন গণমানুষের প্রিয় কবিবিদ্রোহী কবি । আমাদের চারদিকে তাকালে কর্মগুণের প্রাধান্য দেখতে পাওয়া যায়। গােবরে যে পদ্মফুল জন্মে, অথচ এর সৌন্দর্য সকলকে বিমােহিত করে। সুতরাং কর্মই প্রধান। আর মানুষের উচিত জনের জন্য যে গ্লানি কিংবা গৌরব সব পরিহার করে আপন কর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। মানবজীবনে যে যশ, সম্মান, ভালােবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, প্রতিপত্তি এসবই কর্মের ফসল, জন্মের কোনাে ভূমিকা নেই।

পৃথিবীতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার কর্মে; মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে তার কর্মের ওপর, জন্মের ওপর নয়। যারা আজ মহান মানুষ হিসেবে স্মরণীয় তাঁদের পুণ্যকর্মই ছিল একমাত্র ব্রত। সুতরাং মানুষের মহকর্মেই তার প্রকৃত পরিচয়।

Next Post Previous Post
2 Comments
  • Unknown
    Unknown ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

    ভালো ই

    • Hasibul
      Hasibul ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

      আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।

Add Comment
comment url