কলেজে তোমার শেষ দিনের মনের অবস্থা বর্ণনা করে বন্ধুকে চিঠি লেখ

কলেজে তোমার শেষ দিনের মনের অবস্থা বর্ণনা করে বন্ধুকে চিঠি লেখ

✱ কলেজে তোমার শেষ দিনের মনের অবস্থা বর্ণনা করে বন্ধুকে চিঠি লেখ ।

কোটালীপাড়া, গােপালগঞ্জ। 

১৭ জানুয়ারি ২০১ 

বন্ধুবর দীপন

আমার অশেষ প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। ঘণ্টা-দুই হলাে দীর্ঘ দুবছরের স্মৃতিবিজড়িত কলেজ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরেছি। পেটে খিদে আছে অথচ হৃদয়-মন দুঃখে ভারাক্রান্ত বিধায় খেতে ইচ্ছা করছে না। আমার মনে হলাে, তােমার কাছে দু-কলম লিখতে পারলে আমার বেদনাভারাক্রান্ত হৃদয় কিছুটা হলেও হালকা হবে।

তুমি তাে জানাে, আজ আমাদের কলেজ-জীবনের শেষদিন, বিদায়ের দিন। কলেজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে আমরা যারা পরীক্ষার্থী, সবাই অন্যদিনের চেয়ে দু-ঘণ্টা আগেই কলেজে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম। কিন্তু হায়! আজ কারাে মনে কোনাে চঞ্চলতা ছিল না, কোনাে আনন্দ ছিল না, সবার চোখেমুখে একটা বিষতার ছাপ লক্ষ করা গেছে। চার দান করুন ঘণ্টা ধ্বনিত হচ্ছিল, গির্জার ঘণ্টাধ্বনির মতাে সে ধ্বনি আকাশে-বাতাসে অনুরণিত হয়ে আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। মনে হচ্ছিল, সবচেয়ে বেশি কষ্ট বােধহয় আমিই পাচ্ছি। 

যাই হােক, যথাসময়েই বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। অনুষ্ঠানের শুরুতেই একাদশ শ্রেণির কৃতী ছাত্রী লাবণি সবাইকে ফুলের মালা পরিয়ে দিল। দ্বাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র তন্ময় সূচনা ভাষণ দিল। কলেজের অন্যান্য শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে অনেকে বক্তব্য রাখলেন আমাদের প্রতি তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করল। কিন্তু যখন আমাকে বক্তব্য রাখার জন্য বলা হলো, তখন আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না। কীভাবে কথা বলব। বন্ধু, তুমি তাে জানাে স্বভাবতই আমি একটু বেশি আবেগপ্রবণ, তার ওপর বিদায়ের এই ক্ষণে কিছু বলা আমার পক্ষে যে একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু অধ্যক্ষের আদেশ বলে তা প্রত্যাখ্যান করাও সম্ভব নয়। অতএব, বক্তব্যের জন্য দাড়ালাম । মুহুর্তেই মানসপটে ভেসে আসতে থাকল কলেজ-জীবনের সমস্ত স্মৃতি । মনে পড়ে দুবছর আগের কথা। যেদিন কুহেলিকাচ্ছন্ন শীতে এ কলেজে প্রথম পদার্পণ করেছিলাম; সে সময়ের পরিক্রমায় সবার সঙ্গে গড়ে ওঠে মায়ার বন্ধন । শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তির বিনিময়ে পেয়েছি অকৃত্রিম ভালােবাসা ও প্রাণঢালা স্নেহ । কলেজের পিয়ন, দারােয়ান, দপ্তরি এরাও হয়ে উঠেছিল আমার অতি আপনজন । আজ যেন নাড়ির বাধন ছিন্ন করে সবাইকে ছেড়ে যেতে হৃদয় হাহাকার করছে। তাই বিদায়বাণী উচ্চারণ করতে ঠোট কেঁপে উঠছিল, চোখ হয়েছিল অশ্রুসিক্ত। আমার খুব ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু বলা সম্ভব হচ্ছিল না। যেতে নাহি মন চায় – এতটুকু বলার পর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমি জানি, আমার মুখ দিয়ে আর একটি শব্দ বের হলে তা গগনবিদারী চিৎকার হয়ে বের হতাে। দুচোখের জল বাধ মানল না। প্রায় পনেরাে সেকেন্ড পর অতি কষ্টে উচ্চারণ করলাম আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন। এই বলে আমাকে আমার বক্তব্য শেষ করতে হলাে। 

সভাপতির ভাষণে বক্তব্য রাখলেন আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন অধ্যক্ষ জয়দেব বর্মণ। তিনি আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে জীবন চলার পথের পাথেয় সম্পর্কে নানা উপদেশ দিলেন। সবশেষে, আমাদের উপহার হিসেবে একটি করে বই দেওয়া হলাে। এরপর সংগীতানুষ্ঠান। বিদায়ের গানে বেদনার সুর বেজে উঠেছিল আমার মনে-প্রাণে। প্রকৃতপক্ষে, কলেজের শেষদিনে আমার মনের অবস্থা ঠিক তােমাকে বােঝাতে পারব না। আমার ক্ষুদ্র জীবনের আজ এক স্মরণীয় দিন। স্মৃতির পাতায় এ দিন চিরদিন অম্লান। হয়ে থাকবে। তবে বন্ধু, আজ আর নয় । ভালাে থেকো । তােমার বাসার সবার প্রতি রইল আমার শ্রেণিভেদে প্রণাম ও স্নেহ।

ইতি
তােমারই প্রীতিমুগ্ধ
রঞ্জন

পেত্র লেখা শেষে খাম এঁকে খামের ওপরে ঠিকানা লিখতে হয়
✱ পেত্র লেখা শেষে খাম এঁকে খামের ওপরে ঠিকানা লিখতে হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url