বাংলা রচনা : আমার জীবনের লক্ষ্য
আমার জীবনের লক্ষ্য
অথবা, আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে
[ সংকেত: ভূমিকা; লক্ষ্য স্থির করার প্রয়ােজনীয়তা; আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে; ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্য; লক্ষ্য অর্জনের উপায়; জীবনের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলা; জনসেবা ও কর্মজীবন; উপসংহার । ]
ভূমিকা : জীবন সে তাে পদ্ম পাতায় শিশির বিন্দু- মানবজীবন সত্যিই খুব ছােটো, সংক্ষিপ্ত ও ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু তারপরও মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব বলে মানবজীবন দুর্লভ। মহাবিশ্বের অনন্তকালের পরিমাপে সংক্ষিপ্ত জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে গড়ে তােলার জন্য। সুনির্দিষ্ট কোনাে লক্ষ্য বা পরিকল্পনার একান্ত প্রয়ােজন। লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন নৌকার মতাে। লক্ষ্যহারা জীবন সময়ের ঘূর্ণিচক্রে পড়ে দিশেহারা হয়ে যায় । তাই মানুষ মাত্রই জীবনের শুরুতে একটা লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য স্থির করে নেওয়া অত্যাবশ্যক। নির্ধারিত লক্ষ্য ঠিক রেখে শ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং একাগ্রতা নিয়ে অগ্রসর হলে জীবনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
লক্ষ্য স্থির করার প্রয়ােজনীয়তা : মানুষের জীবনে লক্ষ্য স্থির করার প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম । আমি বিষয়টি নিয়ে খুব ছােটোবেলা থেকেই ভেবেছি। তখন বয়স কম ছিল তাই মন ছিল চঞ্চল । কিন্তু সেই চঞ্চল মনে ছিল অসীম কৌতূহল। পৃথিবী-প্রকৃতির চারদিকে তাকিয়ে যা দেখতাম, তাতেই রােমাঞ্চিত হতাম । আকাশে বিকট আওয়াজ তুলে বিমান উড়ে যেতে দেখে ভাবতাম, বড়াে হয়ে আমি। একজন পাইলট হব । আবার পাঠ্যবইয়ে বিজ্ঞানী নিউটন, আলভা এডিসন বা গ্যালিলিওর-চমকপ্রদ আবিষ্কারের কাহিনি পড়ে বিস্মিত হয়ে ভাতাম, আমি একজন মস্তবড়াে বিজ্ঞানী হব। আবার কখনাে রবীন্দ্রনাথ কিংবা কাজী নজরুলের লেখা পড়ে তন্ময় হয়ে ভেবেছিআমি একদিন তাঁদের মতাে জগৎবিখ্যাত সাহিত্যিক হব । কিন্তু একটু বড়াে হওয়ার পর যখন জ্ঞান বুদ্ধি কিঞ্চিৎ বাড়ল তখন বুঝতে পারলাম, ইচ্ছে করলেই যা কিছু হওয়া যায় না। তার জন্য অসাধারণ মেধা থাকা চাই, স্রষ্টা প্রদত্ত প্রাতভা থাকা চাই '' ইচ্ছা শক্তি, আন্তরিক প্রচেষ্টা আর নিরলস চর্চা অব্যাহত থাকলে যেকোনাে উদ্দেশ্যই সাধন করা সম্ভব। তাই জীবনে শ " সেটা স্থির করা সর্বাগ্রে বিবেচ্য বিষয়।
আমার যা হতে ও করতে ইচ্ছে করে : আমার একজন ডাক্তার হয়ে মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে ইচ্ছে করে। মনুষ্যজীবনে মানুষের সেবা করার চেয়ে আর বড়াে কোনাে ধর্ম নেই। তাছাড়া আমাদের জনবহুল দেশে প্রয়ােজনের তুলনায় দক্ষ চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল বিধায় ব্যাধিগ্রস্ত গরিব-দুঃখী মানুষের ভােগান্তির শেষ নেই। তাই আমি অনেক ভেবেচিন্তে আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছি । যে, বড়াে হয়ে আমি একজন ডাক্তার হব। বস্তুত, আমার এ লক্ষ্য নির্ধারণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলাে মানবসেবা।
ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্য : আমাদের দেশের অধিকাংশ লােক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। আমি আমার জীবনের চারদিকে যে করুণ জীবন চিত্র দেখেছি তাতে একটা বেদনাকাতর অনুভূতি আমার মনে পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। এমন বেদনাঘন অবস্থার পরিবর্তনের জন্য একটা তাগিদ আমি সব সময়ই অনুভব করি। আর সেটা হলাে দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়ানাে, তাদের জন্য কিছু করা। দারিদ্র্যের কারণে তারা সবসময় সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিবছর দেশের হাজার হাজার সম্ভাবনা অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এসব অসহায় মানুষদের জীবন-মৃত্যু অনেকাংশে ডাক্তারদের ওপর নির্ভরশীল। তাই এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা প্রদানের অন্যতম উপায় হিসেবে আমি এমন মহতী লক্ষ্য নির্বাচন করেছি। বস্তুত আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবা এখন সীমিত ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। দেশের বিপুল জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা যেমন কম, তেমনি ডাক্তারদের শহরমুখী মনােভাবের কারণে গ্রামের সাধারণ মানুষ ভালাে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বড়াে বড়াে চিকিৎসকের মধ্যে এখন সেবার চেয়ে ব্যবসায়িক মানসিকতা ঢুকে পড়েছে। তাই একজন নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসক হিসেবে আমি ভবিষ্যতে ভালাে ডাক্তার হতে চাই।
লক্ষ্য অর্জনের উপায় : বর্তমানে আমি নবম শ্রেণির ছাত্র। আমি কাক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভালােভাবে লেখাপড়া করব যাতে, এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ নিয়ে পাশ করতে পারি। এইচএসসি পাশ করার পর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হব । মেডিকেল কলেজে পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর এমবিবিএস পাশ করে একজন দক্ষ ডাক্তার হয়ে এদেশের দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াব। আমার কর্মজীবন । আমি মানবসেবায় নিয়ােজিত করব। মানবসেবার মতাে মহৎ কাজের মাধ্যমে আমি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।
খুব সুন্দর হয়েছে
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।