একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বা স্মরণীয় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখ

একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বা স্মরণীয় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখ


✱ একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার বা স্মরণীয় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখ।

 মিরপুর, ঢাকা। 
১৫ জুলাই ২০১৭
প্রিয় শ্রেয়ান 
প্রীতি ও শুভেচ্ছা নিও। তােমার চিঠি ঠিক সময়েই পেয়েছি। কিন্তু আমার মনের আকাশ আজ বেদনার বিষন্ন মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। বন্ধু। গতকাল আমি এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। বস্তুত আমি নিজেও ওই দুর্ঘটনার শিকার ছিলাম। ভাগ্যের জোরে অল্পের জন্য আমি প্রাণে বেঁচে গেছি। কিন্তু ঘাতক ট্রাক চিরতরে কেড়ে নিয়েছে আমার সহপাঠী সুব্রতকে। এ দুর্ঘটনার যে বীভৎস রূপ দেখেছি, তা সত্যিই ভােলার নয়। এ রকম একটি মর্মন্তুদ ঘটনা চিরদিন আমার স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে। তােমাকে এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিচ্ছি। 

গতকাল কলেজ ছুটির পর, আমি আর সুব্রত একসাথে হাঁটছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একসঙ্গে বাসে চড়ব। মিরপুর ১১, বাস স্ট্যান্ডের কাছে আসতেই ফিরে দেখি একটা দানব ট্রাক উন্মত্তের মতাে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। মূল সড়ক ছেড়ে হঠাৎ ফুটপাতে উঠে গেল ঘাতক ট্রাকটি। আমি দ্রুত পশ্চিম দিকে সরে গেলাম এবং সুব্রতকে আমার দিকে জোরে টান দিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারিনি। আমি অল্পের জন্য রেহাই পেলেও সুব্রত ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যাই। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছিল। আমি কী করে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলাম, তা আমার নিজেরই অজানা। ট্রাফিক পুলিশ ও উপস্থিত মানুষ ট্রাকটিকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করে। পুলিশ ড্রাইভারকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। জনতার কয়েকজন আমাকে সহযােগিতা করে। তারপর আমরা সুব্রতর লাশ নিয়ে তার বাড়িতে যাই। সে সময় যে কী হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়, তা তােমাকে বলে বােঝাতে পারব না। সুব্রতর মা-বাবা পাগলের মতাে আর্তনাদ করতে থাকেন। ওর ছােটো । বােনটি ওর লাশের ওপর পড়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দাদা দাদা বলে ডাকতে থাকে। সে করুণ দৃশ্যে আমি বেশিক্ষণ চোখ রাখতে পারিনি। অশ্রুসিক্ত চোখে লােকের ভিড় ঠেলে বাইরে এসে দাঁড়াই। সে দৃশ্য যেন আমাকে বারবার জ্ঞানশূন্য করে তুলছিল। ওহ, সে দৃশ্য আমি কোনােদিন ভুলতে পারব না। কাল থেকে এখন পর্যন্ত আমি জল ছাড়া আর কিছু খাইনি; আমার গলা দিয়ে কিছু নামছে না। এ রকম জ্বালাময় দুঃসহ স্মৃতিকে আমি মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছি না। কাল সমস্ত দিন অস্থির বেদনাহত অবস্থায় অতিবাহিত করেছি। তােমাকে বলে সেই ব্যথার ভার ঈষৎ হালকা হলাে। আজ আর বিশেষ কিছু বলার নেই। সাবধানে থেকো। তােমার বাবা-মাকে আমার প্রণাম দিও।

ইতি         
তােমার প্রীতিমুগ্ধ
সৃজন        




[ পেত্র লেখা শেষে খাম এঁকে খামের ওপরে ঠিকানা লিখতে হয়। ]
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url