অভিজ্ঞতা বর্ণনা : পূর্ণিমা রাত উপভোগ
পূর্ণিমা রাত উপভোেগ
পূর্ণিমা রাতের কথা মনে হলেই, মনের আয়নায় আকাশ জোড়া আলাের বন্যার ছবি ভেসে ওঠে। পূর্ণিমা মানে আলাে আর আলাে । প্রতিদিনই আকাশে চাঁদ ওঠে। কাল পরিক্রমায় কৃষ্ণপক্ষ পার হয়ে আসে শুক্লপক্ষ। আকাশে হেসে ওঠে বাঁকা চাঁদ। একটি ছােট্ট চাঁদ। ধীরে ধীরে পূর্ণতা পায়, আসে মায়াবী মনােহর অনিন্দ্য সুন্দর পূর্ণিমা। পূর্ণিমা আসে পূর্ণিমা যায়। মানুষ হয়তাে সব পূর্ণিমা রাতের খবরও রাখে না। আমার জীবনেও এমন কত পূর্ণিমা এসেছে, চলেও গেছে অবলীলায় । কিন্তু একটি পূর্ণিমা রাত আমার জীবনে অম্লান হয়ে আছে। বাকি জীবনে আমি হয়তাে সেই রাতের কথা ভুলতে পারব না। গত বছরের কথা, আমরা সবাই মিলে বেড়াতে যাই চট্টগ্রামে আমার চাচার বাসায়। দু-তিন দিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে সব দেখা শেষ। বিকেলে পতেঙ্গা থেকে ঘুরে । আমরা বাসায় ফিরেছি। সারাদিন হৈ-হুল্লোড় করে পার করে অপার আনন্দ পেয়েছি। দিন শেষে রাত আসে। যথারীতি সবাই ১০টার দিকে রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চাচাতাে ভাই-বােনদের সাথে নিয়ে বাড়ির । ছাদে উঠে যাই । ছাদে যেতেই আমরা সবাই অবাক হয়ে যাই। কারণ সে রাত ছিল পূর্ণিমার রাত। নীলাকাশের বুকে বিশাল এক চাঁদ স্নিগ্ধ হাসি ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বময়। যে হাসির বন্যায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আলাের ঝরনা। যে দিকেই তাকাই কী যে এক স্নিগ্ধ অনুভূতি প্রকাশ করা কঠিন। সবাই নির্বাক, কারাে মুখে কথা নেই। মনে হলাে এমন রাত আর কেউ কখনাে দেখেনি। হঠাৎ নীরবতা ভঙ্গ করে আশিক রুনিকে উদ্দেশ করে বলে— কী দেখছ এমন করে?’ অদূরে একটি পাহাড় দেখিয়ে রুনি বলে, দেখ গাছগুলাে কত চমৎকার লাগছে। আমাদের সকলের দৃষ্টি চলে যায় পাহাড়টির দিকে। হালকা হাওয়ায় গাছের ডালগুলাে নড়ছে । দূর থেকে মনে হয়েছিল গাছগুলাে হাত নেড়ে আমাদের ইশারা করে কাছে যাওয়ার জন্য ডাকছে। এরই মাঝে নিশাচর পাখিদের ওঠাউড়ি খুব ভালাে লাগছিল। রাতের বেলায়ই অন্তু পাহাড়ে যাওয়ার জন্য বায়না ধরল । ওর কথা শুনে আমরা তাে ভয়েই অস্থির। পাগল বলে কী! রাতের বেলায় পাহাড়ে যাবে । আমরা হাসাহাসি করতে করতেই হঠাৎ মনে হলাে পাহাড়ের গাছে কী যেন নড়ছে। সবার দৃষ্টি চলে গেল পাহাড়ের দিকে। পূর্ণিমার চাঁদের আলােয় সবই মােটামুটি দেখা যাচ্ছে। মুহূর্তেই কয়েকটি বিশালাকার পাখি বিকট আওয়াজ করে উপরে উড়তে শুরু করল । আমরা সবাই ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করে দিলাম। আমাদের চিৎকার শুনে চাচা ছাদে চলে আসলেন। ঘটনা শুনে তিনি বললেন- ওগুলাে বড়াে বড়াে শকুন, ভয়ের কিছু নেই। তারপর সবাই বাসায় ফিরে আসি। পূর্ণিমার ঐ রাতটি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।