অভিজ্ঞতা বর্ণনা : একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা 

সেদিন ছিল সােমবার। দুপুরে বাইরে গিয়েছিলাম বন্ধুর সাথে । জামিলের মামা বিদেশ থেকে এসেছে তার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে। এটা-সেটা করতে করতে অনেক কিছু কেনা হয়ে গেছে। একটি স্কুটার নিয়ে আমরা মার্কেট থেকে ফিরে আসি। ফিরতে ফিরতেই আকাশটা কেমন যেন কালাে হয়ে যাচ্ছিল। মনে হলাে যেন মুহূর্তের মধ্যেই এক বিশাল অন্ধকার সমস্ত আকাশকে গ্রাস করে ফেলবে। জামিলদের বাড়ি থেকে খুব তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসি। ক্রমেই আকাশ কালাে মেঘে ছেয়ে যায়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে থাকে। কিছুক্ষণ পরই ঘনায়মান সন্ধ্যায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। চারপাশের সকল শব্দ থেমে গিয়ে কানে আসতে থাকে ক্রমাগত বারিপাতের শব্দ । সে দিনের সে মুহূর্তকে ভাবতে এখনাে শরীর শিউরে ওঠে। আমি পড়ার ঘরে বসে আছি জানালার পাশে । খােলা জানালার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির পতন দেখছি । ঝাপসা অন্ধকারে সবকিছু দৃশ্যমান না হলেও কী এক অনির্বচনীয় সৌন্দর্য আমার চোখে ধরা দিলাে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলাে যখন গাছের পাতায় পড়ছে, পাতাগুলাে কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমার কাছে মনে হলাে অভিমানী প্রিয়া তার প্রিয়ের আদর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে বারবার। বাইরের সবকিছু ক্রমেই ঝাপসা হয়ে অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। একটু পরেই মসজিদ থেকে ভেসে এলাে আজানের ধ্বনি। বৃষ্টি কমছে না। মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ছে। আমার মনে হলাে এই বর্ষণেই বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। এমন সময় পাশের রুম থেকে মােবাইল বেজে উঠল। বাবা তখনও অফিস থেকে বাসায় ফেরেননি। আমি বৃষ্টির রিমঝিম ছন্দে নিজেকে হারানাের চেষ্টা করছি । মায়ের পায়ের আওয়াজে আমার মগ্নতা কেটে গেল। মার হাতে চা। বললাম, “মা বসাে। বৃষ্টি খুব ভালাে লাগছে তাই না মা? মা হালকা হেসে সম্মতি দিলেন। বৃষ্টির শিহরন শরীরে নিয়ে মা ছেলের এক সাথে চা খাওয়া হলাে। মা বললেন, “তাের বাবা বাজারে বৃষ্টিতে আটকে আছে। ছাতা নিয়ে এগিয়ে যা। আমি দুটো ছাতা নিয়ে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বাজার দূরে নয়, পাঁচ/সাত মিনিটের পথ। গনু কাকার চায়ের দোকান থেকে বাবাকে নিয়ে ফিরছি। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যেই হঠাৎ বজ্রপাত শুরু হলাে। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই প্রচণ্ড আওয়াজে একটি বজ্রপাত হয়। আমি ভয়ে ছাতা ফেলে দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে যাই। কিন্তু রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় বাবাকে ধরতেই আমরা দুজনে পিছলে পড়ে যাই। সে কী কাণ্ড। তারপর ভিজতে ভিজতে বাবা-ছেলে দুজনে বাড়ি ফিরি । এ স্মৃতি কখনাে ভুলব না।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Unknown
    Unknown সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১

    পড়ে খুব ভালো লাগল। bangla note book এর পাশে আমরা সবাই আছি।
    Welcome!

Add Comment
comment url