অনুচ্ছেদ রচনা : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র বিশেষ । এ চেতনা ধারণ করেই বাঙালি জাতি বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধিশালী, উদার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবে, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল ভিত্তি ছিল দেশপ্রেম। আর দেশপ্রেমকে ভিত্তি করেই বিকশিত হয়েছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। গােটা বাঙালি জাতি দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিল পাকিস্তানি হায়েনাদের এদেশ থেকে চিরতরে তাড়াবার জন্য। তারা চেয়েছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন স্বদেশ যেখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-জৈন একসাথে মিলেমিশে থাকবে এবং আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে। বাঙালির এরূপ আশা ও প্রত্যয় থেকেই ১৯৭১-এ গােটা জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জন করেছিল মহান স্বাধীনতা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, স্বাধীনতা লাভের পর পরাজিত পাকিস্তানিদের এদেশীয় দোসর এবং বিদেশি অপশক্তি বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করতে তৎপর হয়ে ওঠে। তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদকে বিকশিত হতে দেয় না। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে অপসারিত হয়। স্বাধীনতার শত্রু এদেশের কুচক্রীমহল একের পর এক ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা পুনরায় পাকিস্তানি ভাবাদর্শে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। বারবার সামরিক শাসনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পুনরায় গণতান্ত্রিক পথে নতুন যাত্রা শুরু করে। ধীরে ধীরে মানুষ আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠে। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে দেশ ও জাতি এগিয়ে চলেছে। এ অগ্রযাত্রা বিঘ্নিত করার সকল ষড়যন্ত্র মােকাবিলা করে জাতিকে এগিয়ে যেতেই হবে। কেননা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির অন্যতম হাতিয়ার।
অসাধারণ।
আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম । আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন ।