অনুচ্ছেদ রচনা : বর্ষণমুখর দিন
বর্ষণমুখর দিন
শ্রাবণ মাস ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ । সারা দিন অবিরাম বৃষ্টি। কখনাে থেমে থেমে আবার কখনাে অঝোর ধারায় বষ্টি নামে। মনে হয় যেন বৃষ্টির মহােৎসব চলছে। দিনের আলাে স্লান হয়ে যায়। মাঝে মাঝে বিদ্যতের ঝলকে চারদিক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আকাশের গুডুম ডুম বজ্রনিনাদ ধ্বনিত হয়। মানুষ আটকা পড়ে গৃহকোণে, তবে মন চলে যায় সুদুরের অচিনপুরে। বাতাসের চকিত ঝাপটায় বৃষ্টির নাচন শুরু হয়। মানব-মনে আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলাে জেগে ওঠে। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে মনের গভীরে বেদনার বিষন্ন সুর ঝংকৃত হয়। বাইরে প্রকৃতির জগতে নতুন রূপ বিরাজ করে। গাছের পাতায় ফোটা ফোটা বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ প্রকৃতির গায়ে শিহরন তােলে। একটানা বৃষ্টিতে নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠঘাট ভেসে একাকার হয়ে যায়। অতি জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয় না । দাওয়ায় বসে কিংবা ঘরের জানালা দিয়ে মানুষ বর্ষা-প্রকৃতির রূপের খেলা দেখে । কৃষকের গােয়ালে বাধা গরুগুলাে মাঝে মাঝে হাম্বা রবে ডেকে ওঠে। কৃষক ছুটে যায় এবং খড়ের গাদা থেকে খড় এনে ওদের ক্ষুধা নিবৃত্তির চেষ্টা করে। গৃহিণীরা ব্যস্ত থাকে ঘর কন্নার কাজে। সকাল থেকে দুপুর আবার দুপুর গড়িয়ে বিকাল— এমনি করে সময় এগিয়ে চলে । কাজকর্মে স্থবিরতা, কর্মহীনতা, অলসতা আর গভীর ভাব-তন্ময়তার মধ্য দিয়ে মানুষের সময় কাটে । সারা দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। শহরের রাস্তাঘাটে যানবাহনের চলাচল খুব কমে যায়। অধিকাংশ গাড়ি হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে। শিক্ষার্থীদের স্কুলকলেজে যাতায়াতে কষ্ট হয়। যারা জরুরি প্রয়ােজনে রাস্তায় বের হয় তাদের ছাতা ছাড়া চলে না। কেউ কেউ রেইনকোট গায়ে জড়িয়ে অতি প্রয়ােজনীয় কাজ সেরে আবার ঘরে ফিরে আসে। বর্ষণমুখর দিনে গ্রাম ও শহরের রূপ কিছুটা ভিন্ন হলেও উভয় ক্ষেত্রেই কর্মে স্থবিরতা নেমে আসে। মানুষ আপন মনে কী যেন একটা কিছুর অভাব বা অতৃপ্তি অনুভব করে। আর এই চাওয়া-পাওয়ার অতৃপ্তি ও একটানা বৃষ্টির মধ্য দিয়ে এক সময় দিনের ম্লান আলাে সন্ধ্যার অন্ধকারে মুখ লুকায়।