অনুচ্ছেদ রচনা : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ একটি নিয়মিত ব্যাপার। প্রায় প্রতি বছরই এদেশে কোনাে না কোনাে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। বন্যা, খরা, জলােচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডাে ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে আছে এদেশের মানুষ । আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের মানুষের সাজানাে-গােছানাে জীবন ও সংসারকে তছনছ করে দেয়। মানুষের জীবনে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট । ১৯৭০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এদেশের মানুষ বহুবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করেছে। ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বরে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এক প্রলয়ংকরী ঝড় ও জলােচ্ছ্বাসে ধন-জন হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিল। ১৯৮১ সালের ডিসেম্বরে হানা দিয়েছিল এক প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় । ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে সমুদ্র-উপকূলবর্তী এলাকা ও দ্বীপগুলাের ওপর আঘাত হেনেছিল এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলােচ্ছ্বাস। তারপর ‘সিডর’ ও ‘আইলা’র তাণ্ডবে বিধ্বস্ত ও জলমগ্ন হয় এদেশের লাখ লাখ মানুষ। নার্গিস’ ও ‘রােয়ানাে’ নামক ঘূর্ণিঝড়ও কম দাপট দেখায়নি। ১৯৭৪, ১৯৮৮, ১৯৯৮ এবং ২০০৪ সালের বন্যা এদেশের মানুষের জীবন ও সংসারকে তছনছ করে দিয়েছিল। অনাবৃষ্টির কারণেও বাংলাদেশের মানুষ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আর নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষ প্রায় প্রতিবছরই নদী-ভাঙনের শিকার হয়ে হারাচ্ছে তাদের ঘরবাড়ি ও সহায়-সম্পদ । আবার ইদানীং ভূমিকম্প নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এদেশের প্রায় সকল মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে। ২০০৬, ২০১৫ ও ২০১৬ সালের ভূমিকম্পের প্রচণ্ডতা যেন আরও ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের আভাস দিয়ে আমাদের সতর্ক করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্ধ করার শক্তিসামর্থ মানুষের না থাকলেও পরিকল্পিত উপায়ে এর ভয়াবহতা লাঘব করা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সরকারও প্রাকৃতিক দুর্যোগের করালগ্রাস থেকে এদেশের মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করে চলেছেন। বেড়িবাঁধ নির্মাণ, উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন, আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও আগাম সতর্কতা দানের ব্যবস্থাসহ নানা রকম উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাবে ।