অনুচ্ছেদ রচনা : মাতৃভাষা
মাতৃভাষা
মাতৃভাষা বলতে বােঝায় স্বজাতীয় ভাষা। অর্থাৎ মায়ের মুখ থেকে বাল্যকাল হতে যে ভাষা শিক্ষা করা হয় তাকে মাতৃভাষা বলে। কবির ভাষায়, ‘মিটায় মনের পিপাসা, সুমধুর মাতৃভাষা। মানবজীবনে মাতৃভাষার কোনাে বিকল্প নেই। মাতৃভাষা প্রাণ-মনকে দেয় তৃপ্তি আর চিন্তা-চেতনাকে দেয় দীপ্তি। যে মাতৃভাষাকে অবহেলা করে সে মূখ ও অধম। বস্তুত মাতৃভাষার সাবলীল সােহাগে উক্ত ভাষা ব্যবহারকারী, সন্তান নিবিড় প্রশান্তি লাভ করে। মাতৃভাষায় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করা যত সহজ অন্য ভাষায় সেটা তত সহজ নয়। মাতৃভাষা সহজাত আপন ভাষা, অন্য ভাষা পরের ভাষা। তাছাড়া, বিদেশি ভাষা শিখে-পড়ে আয়ত্ত করাটাও কষ্টসাধ্য। ব্যাপার। মাতৃভাষা যেমন প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার অবলম্বন তেমনি চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধনার মাধ্যম হিসাবেও এর কোনাে বিকল্প নেই। তাই দেখা যায় মাতৃভাষায় জ্ঞানানুশীলন ব্যতীত বিশ্বে কোনাে জাতিই উন্নতি লাভ করতে পারেনি। মাতৃভাষাকে আশ্রয় করেই প্রকৃতপক্ষে দেশের মানুষের চিন্তশক্তি, বুদ্ধিবৃত্তি, সৃষ্টিশক্তি ও কল্পনাশক্তির যথার্থ বিকাশ সম্ভব। মাতৃভাষার মাধ্যমে ব্যক্তির শিক্ষা সহজ ও পূর্ণাঙ্গ হয়ে থাকে বলে “শিক্ষায় মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ স্বরপ। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, কোনাে শিক্ষাকে স্থায়ী করিতে হইলে, গভীর করিতে হইলে, ব্যাপক করিতে হইলে তাহাকে চির পরিচিত মাতৃভাষায় বিগলিত করিয়া দিতে হয়। তাই শিক্ষা যেখানে মানুষের সহজাত অধিকার, সভ্যতার ক্রমপ্রগতির অনিবার্য অঙ্গীকার, সেখানে কৃত্রিমতার কোনাে অবকাশ নেই । আর এ জন্যই মাতৃভাষার শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয় এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এর গুরুত্ব সর্বজনস্বীকৃত। মানুষের আবেগ-অনুভূতি, ভাবালাপন, সুখ-দুঃখ, আশা-নৈরাশ্য, আনন্দ-বেদনার স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ একমাত্র মাতৃভাষার দ্বারাই সম্ভব। মাতৃভাষা মায়ের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে, দেশের সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে ব্যক্তির গভীর যােগসূত্র গড়ে তােলে। ব্যক্তির সার্বিক শক্তির জাগরণ ও প্রতিভার বিকাশে মাতৃভাষার ভূমিকা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে মাতৃভাষার প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য।