অনুচ্ছেদ রচনা : গণমাধ্যম

গণমাধ্যম

গণমাধ্যম 

রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধনের অপর নাম গণমাধ্যম। রাষ্ট্র পরিচালনায় গণমাধ্যম হলাে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী উপাদান, জনপ্রিয় বিষয় এবং সর্বকালের সর্বাধুনিক পদ্ধতি। গণমাধ্যম বাতাসের মতাে নিরপেক্ষ, জলের মতাে সর্বত্রগামী এবং আলাের মতাে দ্রুত বিস্তারী। সর্বোপরি, জনগণকে প্রভাবান্বিত করতে সবচেয়ে বড় শক্তি হলাে গণমাধ্যম। প্রকৃতপক্ষে, একই সঙ্গে অনেক জনগণের মধ্যে যােগাযােগ স্থাপনের মধ্যবর্তী কোনাে মাধ্যম বা মিডিয়াকে ‘গণমাধ্যম' বলে। গণমাধ্যম জনসংযােগের একটি চমৎকার উপায় । | বর্তমান বিশ্বে প্রচারিত গণমাধ্যমের মধ্যে জনপ্রিয় হলাে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমা। যারা স্বল্পশিক্ষিত বা অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, সংবাদপত্র তাদের শিক্ষা বা জ্ঞানবুদ্ধি বাড়িয়ে তােলে। সংবাদপত্র চলমান এই পৃথিবীর বিচিত্র ঘটনার সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। রাজনৈতিক উত্থান-পতন ও যুদ্ধবিগ্রহের বর্ণনা থেকে শুরু করে বিদ্রোহ, বিপ্লব, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাসহ অজস্র বিষয় আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারি। আর রেডিওতে শ্রোতারা শুনে অনেক কিছু শিখতে পারে, জানতে পারে নতুন নতুন বিষয়। অন্যদিকে টেলিভিশনের ক্ষেত্রে শােনার সঙ্গে সঙ্গে দেখারও বিরাট ভূমিকা থাকে বলে এই গণমাধ্যম আজকের দিনে সবচেয়ে জনপ্রিয়। তবে বর্তমানে আকর্ষণীয় মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেট প্রভৃতি গৌণ গণমাধ্যমগুলােও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বর্তমান যুগে বিজ্ঞানের আশীর্বাদে, প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের ফলে মােবাইল, কম্পিউটার-ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেক দূরের মানুষের কাছেও অতি সহজেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়। ভিডিও কনফারেন্সের দ্বারা এখন টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। গণমাধ্যম মানুষের মনােভাব ও অভিরুচিকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। গণমাধ্যম জনগণের বিনােদনের মাধ্যম হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। কোনাে দেশ, সমাজ ও গােষ্ঠীর শিল্পসংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে গণমাধ্যমে। ফলে এক দেশের সংস্কৃতি সহজেই অন্য দেশে পৌছে যায়। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানুষ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিবর্তনগত প্রযুক্তি ও প্রগতিশীল শিক্ষার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমগুলাের ভূমিকা ক্রমেই বিশেষ অর্থবহ হয়ে উঠছে। বস্তুত, শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ব্যাপক ও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, যা সময়পােযােগী এক কার্যকরী প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচ্য। ভবিষ্যতে জাতীয় অগ্রগতিতে ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গণমাধ্যম আরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে- এটাই আমাদের প্রদীপ্ত প্রত্যাশা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url