অনুচ্ছেদ রচনা : মানবাধিকার
মানবাধিকার
আধুনিক সমাজ ও সভ্যতায় মানবাধিকার অনিবার্যভাবেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সকল দেশের মানুষের কাছে ‘মানবাধিকার’ শব্দটি বহুল পরিচিত। প্রত্যেক মানুষকে মানুষ হিসাবে বাঁচতে হলে কতকগুলাে অধিকার নিয়ে বাঁচতে হয়। মানবাধিকার বিশ্বজুড়ে সর্বজনীন ঘােষণার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে । Human Rights -এর বাংলা পরিভাষা মানবাধিকার । বস্তুত, মানবাধিকার বলতে বােঝায় মানুষের অধিকার। অর্থাৎ মানুষের মৌলিক অধিকারসহ সকল প্রকার অধিকারই মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত। যদিও মানবাধিকার বিষয়টি আপেক্ষিক। এটি দেশ কাল পাত্রের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। মানবাধিকারের প্রথম ধারণা পাওয়া যায় খ্রিষ্টপূর্ব দুই হাজার বছরেরও আগে পৃথিবীর প্রাচীনতম আইন সংকলন ব্যাবিলনের রাজা হাম্বুরাবির নিয়মাবলিতে। কিন্তু আধুনিক মানবসভ্যতায় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের রাষ্ট্রসমূহ মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘঘাষণাপত্র অনুমােদন করে। পরবর্তীতে জাতিসংঘ একের পর এক সামগ্রিক অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের জন্য ক্রমাগত বিভিন্ন মানবাধিকার সনদ পাশ করে চলছে। সেই অনুযায়ী জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি রাষ্ট্র ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস’ পালন করে আসছে।
অন্যান্য দেশের মতাে বাংলাদেশের সংবিধানেও মানবাধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা, কর্মের অধিকার, উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার, বিশ্রাম ও অবকাশের অধিকার, অসহায়তার অভিশাপ থেকে মুক্তির নিশ্চয়তাসহ বাক্ স্বাধীনতা, সংগঠনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবাধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাহীন জনগােষ্ঠীকে শিক্ষা গ্রহণে সচেষ্ট করা, তাদের হৃদয়বৃত্তির বিকাশ ঘটানাে, তাদের সততা ও ন্যায়ের চেতনা সম্পর্কে অবহিত করা মানবাধিকারের প্রথম শর্ত। মানবাধিকার রক্ষায় ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করা জরুরি। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তথা গণতান্ত্রিক মূল্যবােধকে ধারণ করে পরস্পরের প্রতি মমতা, ভালােবাসা ও সহনশীলতার মধ্য দিয়ে সমাজ এগিয়ে যাবে- এটাই একটি সভ্য সমাজের ন্যূনতম বাসনা। আর এই বাসনা পূরণে মানবতার চর্চা করা এবং মানবাধিকার রক্ষা করা অনিবার্য ও অনস্বীকার্য।