অনুচ্ছেদ রচনা : পোশাক শিল্প

পোশাক শিল্প


পোশাক শিল্প 

বাংলাদেশ শিল্পের দেশ নয় । তথাপি যেসব শিল্পে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে তাদের মধ্যে পােশাক শিল্পের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযােগ্য। পােশাক শিল্প বলতে মূলত তৈরি পােশাক শিল্পকেই বােঝায়। যাকে সাধারণত গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি বলা হয় । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক প্রগতিতে পােশাক শিল্পের গুরুত্ব সীমাহীন। কৃষিভিত্তিক এ দেশটিতে পােশাক শিল্পের নিয়ে বাংলাদেশ পােশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৫ সালে এ শিল্পের ইউনিট সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১৫টিতে। বর্তমানে বাংলাদেশে সাড়ে চার হাজারেরও অধিক পােশাক প্রস্তুত ইউনিট রয়েছে। এ শিল্পের ৭৫ ভাগই ঢাকায় অবস্থিত। তবে চট্টগ্রাম, খুলনা ও নারায়ণগঞ্জেও উল্লেখযােগ্য সংখ্যক ইউনিট রয়েছে। স্বল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দক্ষ শ্রমিক, কাঁচামালের সহজলভ্যতা, সহায়ক পরিবেশ ও জলবায়ু এবং রপ্তানির অবাধ সুযােগ ও চাহিদার কারণে এদেশের পােশাক শিল্প লাভজনক এক সমৃদ্ধ খাত হয়ে উঠেছে। আমাদের শিল্পখাতের মােট উৎপাদনের ৭৩ ভাগই আসে পােশাক শিল্প থেকে। পােশাক শিল্প বাংলাদেশের বেকার সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে আমাদের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযােগ করে দিয়েছে এ শিল্প। পােশাক শিল্পে অন্তত ১৮ লাখ শ্রমিক কাজ করছে, যাদের শতকরা ৯০ ভাগই নারী। বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা নারীরা তাদের শ্রম বিনিয়ােগ করে এ শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। পােশাক শিল্প আমাদের দেশে শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটাচ্ছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করেই স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং এবং প্রিন্টিং শিল্প গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পােশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। তারপরই রয়েছে জার্মানির স্থান। এরপর যথাক্রমে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যাণ্ড, কানাডা, বেলজিয়াম ও স্পেন উল্লেখযােগ্য। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের পােশাক শিল্প দ্বিমুখী সংকটের শিকার হয়েছে। একদিকে, আন্তর্জাতিক অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশ, অর্থনৈতিক মন্দা এবং অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ হরতাল-অবরােধ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে বাজার সংকুচিত হয়েছে। তাছাড়া, বর্তমানে বাংলাদেশকে চীন, ভারত, মরিশাসসহ ক্যারিবিয়ান দেশগুলাের সাথে অসম প্রতিযােগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সর্বশেষ তাজরীন স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস এবং রানা প্লাজার মর্মান্তিক ঘটনা ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও সরবরাহকারী দেশ হিসাবে অগ্রাধিকারভুক্ত তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। পােশাক শিল্প . আমাদের গর্ব; আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাই এ শিল্পকে সকল সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের একসাথে কাজ করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url