অনুচ্ছেদ রচনা : নারীশিক্ষা

নারীশিক্ষা

 নারীশিক্ষা 

একটি জাতির উন্নয়নে নারীশিক্ষা অপরিহার্য। কেননা শিক্ষা-দীক্ষায় যে জাতি যত বেশি অগ্রসর, জাতি হিসাবে পৃথিবীতে তাদের অবস্থান তত বেশি সংহত। যেকোনাে দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। সুতরাং নারীশিক্ষা ব্যতীত কোনাে জাতিই সামগ্রিক উন্নয়নের সােপানে পৌঁছাতে পারে না। আদিম যুগের গুহাবাসী মানব নির্মম প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে নর-নারীর পারস্পরিক সহযােগিতায় গড়ে তুলেছে আজকের এ সভ্যতা। অথচ বিভিন্ন ধর্মীয় অজুহাতে, কুসংস্কারে, মতবাদে নারীকে শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞ্চিত করতে পৃথিবীতে নানা ধরনের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। নারীকে শুধু নারী হিসাবে দেখে ভােগের পণ্যে পরিণত করেছে কিছু কায়েমি স্বার্থপর পুরুষ। কিন্তু নারী তার আপন ঔদার্যে, মেধা, দক্ষতায়, শ্রদ্ধা ও ভালােবাসায় অনন্য ভূমিকা রাখছে। সুতরাং তাদেরকে পিছনে ফেলে রাখার কোনাে যৌক্তিকতা নেই। ইসলামে প্রত্যেক নরনারীর জন্য বিদ্যার্জন ফরজ করা হয়েছে । সােভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষালাভকে কেবল অধিকার বলে স্বীকৃতি দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, প্রত্যেক নাগরিকের বিদ্যার্জনের সুযােগ-সুবিধা অবধারিত করে সবার জন্য শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষার যাবতীয় ব্যয় ও কর্তব্যাদি রাষ্ট্র গ্রহণ করেছে। পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলাে শিক্ষাকে শিল্পপণ্যের মতােই একটি লাভজনক পণ্য হিসাবে বিবেচনা করছে এবং এক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে নারীকে শিক্ষাদীক্ষায় সম্পৃক্ত করছে। অথচ এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ ল্যাটিন অ্যামেরিকার কিছু দেশে নারীশিক্ষা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব দেশের কিছু লােকের ধর্মীয় কূপমণ্ডুকতা ও হীনম্মন্যতাই এজন্য সর্বাগ্রে দায়ী । ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কিছু কিছু এলাকায় নারীশিক্ষাকে গুণাহর কাজ বলে অভিহিত করা হচ্ছে। নারীকে বাধ্য করা হচ্ছে অবগুণ্ঠনের মধ্যে চেপে রাখতে। বর্তমানে আইএস নামক একটি সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলাম কায়েমের নামে নারীদের সকল প্রগতিশীলতা থেকে ছিনিয়ে এনে যৌনদাসী বানাচ্ছে। পৃথিবীর সচেতন মানুষ তাদের এ হীন কার্যকলাপে মর্মান্তিকভাবে শঙ্কিত। তদুপরি যুগে যুগে কিছু মহীয়সী নারী সমস্ত শৃঙ্খল ভেঙে প্রতিবাদ জানায়। এদের মধ্যে বাংলাদেশের রােকেয়া সাখাওয়াত হােসেন ও পাকিস্তানের নােবেল বিজয়ী মালালার নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত । তদুপরি নারীশিক্ষার হার মােটেই সন্তোষজনক নয় । বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭, ১৮ (১), ২৮ (২), ২৮ (৩), ২৮ (৪), ২৯ (১), ২৯ (২), ৬৫ (৩) ধারায় নারীর অধিকারের কথা বলা, হলেও বাস্তবে এর প্রায়ােগিক দিকটা সংকুচিত। অনেক শিশু-কিশাের আজও শিক্ষার আলাে থেকে বঞ্চিত। অনেক কিশােরী বইয়ের বদলে বহন করছে গৃহকর্মীর দায়ভার। বাল্যবিবাহের প্রবল প্রতাপে প্রত্যেক অঞ্চলের মেয়ে শিশুরা অপরিণত বয়সেই গৃহবধূতে রূপান্তরিত হচ্ছে। যৌতুকের দাবিতে কিংবা স্বামী-শাশুড়ির নিষ্ঠুর নির্যাতনে অকালে তারা প্রাণ হারায়। ইভটিজিং কিংবা এসিড সন্ত্রাস তুলনামূলকভাবে কমলেও এখনাে অনেক পরিবারের অভিভাবকদের এ ধরনের ভীতি কাটেনি। আমরা কথায় কথায় দৃষ্টান্ত দিই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরােধদলীয় নেতা, বৃহৎ দলের নেতা, স্পিকার, বিচারপতিসহ অনেক নারী উচ্চপদে আসীন আছেন। কিন্তু আনুপাতিক হারে নারীশিক্ষা আজও স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছতে পারেনি। বাংলাদেশের এনজিও, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ নারী অধিকার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যদিও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সােচ্চার, কিন্তু আমাদের বহুদিন ধরে লালন করা পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অন্তরায়। তবে বর্তমান সরকার বিভিন্ন বৃত্তি, উপবৃত্তি ও অনুপ্রেরণা দিয়ে নারীশিক্ষাকে ত্বরান্বিত করার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। শুধু সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে সর্বস্তরের জনসাধারণেরই নারীশিক্ষা নিশ্চিতকরণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসা দরকার । সম্রাট নেপােলিয়ানের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও নারীশিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতে একটি শিক্ষিত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url