অনুচ্ছেদ রচনা : ইবোলা
ইবোলা
একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসের নাম ইবােলা। এটি মূলত একটি আর এন এ ভাইরাস। মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে কঙ্গোর উপত্যকায় প্রবাহিত ইবােলা নদী থেকে ইবােলা ভাইরাসের নামকরণ করা হয়েছে। সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব আবিস্কৃত হয় । মাবুন ভাইরাসের সাথে এ ভাইরাসের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে যা ১৯৬৭ সালে উদ্ঘাটিত হয়। উভয় ভাইরাসই ফিলােভিরিডায়ে পরিবারের সাথে জড়িত ও মানবদেহে রােগ সংক্রমণের জন্য দায়ী । ইবােলা ভাইরাসের ৫টির মধ্যে ৩টি প্রজাতি মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়ে গুরুতর অসুস্থ করার ক্ষমতা রাখে। বাকি ২টি মানবদেহের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে এগুলাের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলাে জাইরে (Zaire) ইবােলা ভাইরাস। ভয়াবহ এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি শতকরা ৯০ ভাগ । মরণঘাতী ভাইরাসটি মানবদেহে রক্তপাত ঘটায়, লিভার ও কিডনিকে অকেজো করে দেয়, রক্তচাপ কমায়, হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দনে বিঘ্ন সৃষ্টি করে শ্বাস-প্রশ্বাসকে ব্যাহত করে। ইবােলা-আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে হালকা জ্বর, মাথাব্যথা এবং শরীরে ব্যথা অনুভব করে। সাধারণত লক্ষণগুলি ধরা পড়ে ভাইরাস সংক্রমণের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর। এই সময়ের মধ্যেই তীব্র মাথা ব্যথা, জ্বর, শরীর ব্যথা, ত্বকে দানা দানা ওঠা, মুখে ঘা, ডায়রিয়াসহ মারাত্মক বমি হতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে শরীরের ভিতর ও বাইরে রক্তপাত হতে পারে । বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে সকল প্রাণী এই ভাইরাস বহন করছে সেগুলাে মূলত কয়েক প্রজাতির বানর অথবা কলাবাদুড়। কেবল ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের তরল পদার্থ নিষ্কাশনের মাধ্যমে এ রােগ স্থানান্তরিত হয়। এটি বায়ুবাহিত রােগ নয় কিংবা ছোঁয়াচে রােগ নয়। কিন্তু আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত, লালা, ডায়রিয়া, বমি, পানি ইত্যাদির স্পর্শে এটি অন্যের দেহে ছড়িয়ে যেতে পারে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর এক হাজারের অধিক লােকের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটেছে। ২০১৪ সালে এক ভয়াবহ মহামারি রূপে এর প্রকোপে গিনি, সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া এবং নাইজেরিয়ায় অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। অদ্যাবধি এ দুর্দান্ত ভাইরাসটির বিরুদ্ধে বিশ্বে তেমন কোনাে প্রতিরােধক ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। হালকা বেদনানাশক এবং রিহাইড্রেশন দিয়ে ইবােলা আক্রান্তের চিকিৎসা হচ্ছে। এ ব্যবস্থা কার্যকরী কোনাে ভূমিকা রাখতে পারেনি। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হলাে এই রােগের লক্ষণগুলাে অন্য আরও অনেকগুলাে রােগের লক্ষণের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়। তাই শনাক্ত করতে যথেষ্ট সময় লেগে যায় । তথাপি বিশ্ব এ রােগের বিরুদ্ধে সােচ্চার হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইবােলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে আক্রান্ত দেশগুলােতে জরুরি অবস্থা ঘােষণা করেছে। এ কারণে আমাদের দেশে ইবােলার আক্রমণ ব্যাপক ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহু সদস্য জাতিসংঘের শান্তি মিশনে পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নিয়ােজিত আছে। এছাড়া ব্যবসায়-চাকরি, ভ্রমণ ও বহুবিধ প্রয়ােজনে অনেক বাংলাদেশি ঐ দেশগুলােতে যাতায়াত করেন। অবশ্য বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছেন। ইদানীং শােনা যাচ্ছে ইবােলা ভাইরাস প্রতিরােধের প্রতিষেধক পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্ববাসীর সাথে আমরাও সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছি, যখন এ জীবনঘাতী ভাইরাসটি চিরতরে নির্মূল হবে।