ভাব-সম্প্রসারণ : মত পুণ্যে-পাপে দুঃখে-সুখে, পতনে-উত্থানে মানুষ হইতে দাও তােমার সন্তানে
মত পুণ্যে-পাপে দুঃখে-সুখে, পতনে-উত্থানে মানুষ হইতে দাও তােমার সন্তানে।
ভাব-সম্প্রসারণ : মানবজীবন পুস্পশয্যা নয়। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে জীবন গড়ে ওঠে। বৈচিত্র্যময় এ নয়। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে জীবন গড়ে ওঠে। বৈচিত্র্যময় প্রতিকূলতায় জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। তরঙ্গহীন জীবনে জীবনের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায় না। পৃথিবীতে জীবন-চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ। অসংখ্য বাধা-বিপত্তি আর দ্বন্দ্ব-সংঘাত এ চলার পথকে মােটেই মসৃণ করে রাখেন। আমাদের জগৎ-সংসারে আছে রােগ-শােক, বিপদ-লাঞ্ছনা, অপমান ইত্যাদি। পদে পদে আছে ভয়ের ও বিপদের প্রকুটি, নৈরাশ্যের নির্মমতা, পরাজয়ের দুঃসহ গ্লানি, শােক ও দুঃখের মর্মান্তিক আঘাত; নানা ছলনা-বঞ্চনা-গঞ্জনা, পেয়ে হারানাের তীব্র ব্যাকুলতা। মিথ্যা মরীচিকার পিছনে দুর্নিবার গতিতে ছুটে চলা এবং পথের শেষে রিক্তহস্তে ফেরা। তবু মানবজীবন এগিয়ে চলে। কারণ এগুলােই জীবনের অপরিহার্য অংশ। তাই জীবন থেমে থাকে না, বরং বিরুদ্ধ শক্তির সঙ্গে নিজেকে সহনশীল করে। যুদ্ধে এগিয়ে যায়। বিপদের পাহাড় ডিঙিয়ে আসে সফলতার জয়ের মালা। যুগে যুগে মানুষ পৃথিবীতে এরই প্রমাণ রেখেছে। আদিম গুহাবাসী মানুষ প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করে পৃথিবীতে আজকের এ সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করার সােপান তৈরি করে। দিয়েছে। তাই অজস্র বাধার প্রাচীর অতিক্রম করেই জয়ের গৌরব অর্জন করাই মানবজীবনের সার্থকতা। দুঃখ-শােকের আঘাতে মনুষ্যত্ব জেগে ওঠে। আগুনে পুড়ে সােনা যেমন খাঁটি হয়— দুঃখ-দুর্দশার আঘাতে আমাদের জীবনও মালিন্যমুক্ত হয় । প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক ডারউইন প্রাণিজগতের মধ্যে সবচেয়ে যে বড়াে গুণটি খুঁজে পান তা হলাে এ সংঘাতময় পৃথিবীতে যােগ্যতম জীবেরাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে। মানুষের জীবনও এক সংগ্রামের জীবন্ত ইতিহাস। জীবনের কঠিন-কঠোর বাস্তবতাকে মােকাবিলা করেই মানুষ পৃথিবীতে সগৌরবে বেঁচে আছে। তাই জীবনে ভীরুতা ও কাপুরুষতার কোনাে স্থান নেই।
মানুষের সার্থকতা অতি সহজে আসে না। অপরিসীম প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে তা অর্জন করতে হয়। এটিই হলাে প্রকতির। স্বাভাবিক নিয়ম। সুতরাং পুণ্য-পাপ, সুখ-দুঃখ, উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই জীবনকে সার্থক করতে হবে।