ভাব-সম্প্রসারণ : জাতীয় জীবনে সন্তোষ এবং আকাঙ্ক্ষা দুয়েরই মাত্রা বাড়িয়া গেলে বিনাশের কারণ ঘটে
জাতীয় জীবনে সন্তোষ এবং আকাঙ্ক্ষা দুয়েরই মাত্রা বাড়িয়া গেলে বিনাশের কারণ ঘটে।
ভাব-সম্প্রসারণ : সন্তোষ ও আকাক্ষা পরস্পর সাপেক্ষ। জাতীয় জীবনে দুটিরই প্রয়ােজন রয়েছে। তবে আতার শতাে কিংবা আকাঙ্ক্ষা জাতির জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রত্যেক জাতিরই জাতীয় ভিত্তিক কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ ও কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয়। তবে এ কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় সম্পদ ও সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে। সম্পদ ও সামর্থ্য কম হলে আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয় না। আবার সম্পদ ও সামর্থ্য চাহিদা অনুযায়ী থাকলে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা সহজেই পূরণ করা যায়। তখন জাতীয় জীবনে প্রাপ্তির পূর্ণতায় শান্তি ও স্বস্তি বিরাজ করে। কিন্তু আকাক্ষার তুলনায় সম্পদ কম হলে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সম্পদ ও সামর্থ্যের তুলনায় আকাঙ্ক্ষা বেশি হলে সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য জাতি অবৈধ পথ ও পন্থা অবলম্বন করে নৈতিকতার পথ থেকে সরে দাঁড়ায়। ফলে জাতীয় জীবনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। চাওয়া অনুযায়ী পাওয়ার অদম্য বাসনায় জাতি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। জাতীয় জীবনে নেমে আসে মহা বিপর্যয়। অন্যদিকে, চাওয়া অনুযায়ী সব পাওয়া গেলে জাতির আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। স্বাভাবিক কারণেই তখন জাতির মধ্যে পরম সন্তোষ বিরাজ করে। তবে সন্তোষের মাত্রা যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে জাতির কর্মোদ্যম ও কর্মস্পৃহা হাস পেতে থাকে। কারণ অভাববােধ না থাকলে জাতি ভােগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে। কাক্ষিত সুখ-সম্পদ পেয়ে নির্ভাবনায় বিলাসের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। ফলে অধিক প্রাপ্তির ক্ষমতা ও সম্ভাবনা থাকলেও জাতি নতুন উদ্যোগ ও কর্ম-প্রচেষ্টা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। নিজের অজান্তেই জাতীয় জীবনে ঔদাসীন্য ও স্থবিরতা দেখা দেয়। জাতি কর্মবিমুখ ও কর্মবিমুখতার কারণে জাতীয় জীবনে পশ্চাৎপদতা শুরু হয় এবং একসময় জাতি গভীর সংকটে নিপতিত হয়। তাই জাতির জন্য অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা যেমন ক্ষতিকর, তেমনি মাত্রাতিরিক্ত সন্তোষও কল্যাণকর নয়।
অতিরিক্ত চাওয়া কিংবা পাওয়া জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। পরিমিত চাওয়া-পাওয়ার মধ্যেই জাতীয় জীবনের কল্যাণ নিহিত।