ভাব-সম্প্রসারণ : অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে

অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে
ভাব-সম্প্রসারণ : অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে

অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে

ভাব-সম্প্রসারণ : নির্লোভ জীবনের মধ্যেই নিহিত আছে প্রকৃত সুখ । অথচ মানুষের চিরন্তন স্বভাব হলাে বেশি বেশি চাওয়া । তার চাওয়ার কোনাে শেষ নেই। কিন্তু এমনও হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, অতিরিক্ত চাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত সব হারাতে হতে পারে। তাই সকলের উচিত অল্পে সন্তুষ্টি অর্জনের মানসিকতা সৃষ্টি করা। অর্থনীতির ভাষ্য মতে, অভাবের মধ্যেই মানুষের জন্ম তাই অভাব চিরন্তন। জীবনের প্রয়ােজনে অভাব অক্টোপাসের মতাে চারদিক থেকে জড়িয়ে ধরবে একথা অনস্বীকার্য। কেননা অভাব জীবন বাস্তবতারই অপরিহার্য অংশ। মানুষকে বেঁচে থাকার প্রয়ােজনে অনেক মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হয় । এজন্য মানুষের অভাবও অনেক। একটি অভাব পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্য একটি অভাব মানুষের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলে । এভাবেই অভাবের উদ্ভব এবং অভাব থেকেই মানুষের মধ্যে জন্ম। নেয় চাওয়ার প্রবণতা। আর চাহিদা বা অভাববােধ থেকেই মানুষের মনে দুঃখবােধ জন্মে । চাহিদার তারতম্যের ওপর দুঃখবােধের স্বল্পতা ও আধিক্য নির্ভর করে । ধনী-দরিদ্র সকলেরই অভাব আছে। তবে তাদের মধ্যে অভাবের ভিন্নতা রয়েছে । বস্তুত প্রাপ্ত সম্পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকলে কোনাে দুঃখ থাকে না। কিন্তু মৌলিক চাহিদা পূরণের অভাবের চেয়ে বিলাস-বাসনা পূরণের অভাবই মানুষকে বেশি দুঃখ ভারাক্রান্ত করে। ধনীদের অনেকেই গগণচুম্বী অট্টালিকায় বাস করে বিলাস সামগ্রীর মধ্যে ডুবে থাকলেও আরও বেশি পাওয়ার আশায় সর্বদা চিন্তাক্লিষ্ট থাকে। তারা সম্পদ বৃদ্ধির নেশায় দরিদ্র জনগণের মুখের অন্ন। পর্যন্ত কেড়ে নেয়। অপরদিকে, বিত্তহীনরা বিত্তবানদের ধনৈশ্বর্য দেখে সম্পদ আহরণের ব্যর্থ চেষ্টা করে এবং সর্বদা হা-হুতাশ করে বেড়ায়। বস্তুত যেকোনাে জিনিসের আধিক্য মানবজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, পার্থিব সম্পদ মানুষকে ক্রমেই অতপ্ত করে তােলে এবং মনুষ্যত্ব বিলীন করে দেয়। স্বল্পাহার যেমন মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তদ্রুপ অল্প চাহিদাসম্পন্ন। মানুষ সহজেই নিজেকে সুখী ভাবতে পারে। মানুষ যদি তার যা আছে সেগুলাে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে তাহলে তার আর দুঃখ থাকে। কেননা অভাবের বৈশিষ্ট্যই এই যে, তা যতই পূরণ হবে ততই বৃদ্ধি পাবে। আর চাহিদা থেকেই যেহেতু অভাবের জন্ম, সেহেতু চাহিদা সীমিত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ। সতত উপকরণ নিয়ে দিনাতিপাত করা যায় জীবনযাত্রা তত সুখের হয় । বস্তুত অভাবকে অভাব হিসেবে বিবেচনা না করলে দঃখের আগমন ঘটে না। অভাববোেধ যার যত কম, তার দুঃখও তত কম। তাই অভাবের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে চাহিদাকে সীমিত রেখে অল্পে তুষ্ট থাকাই সর্বোত্তম পন্থা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url